By মুক্তি বার্তা
তিনি বাংলা সাহিত্যের স্বল্পায়ু কবি
সাজেদ রহমানঃ তিনি বাংলা সাহিত্যের স্বল্পায়ু কবি। ঝড়ের গতিতে এসে যিনি বাংলা সাহিত্যে রাজ করতে চেয়েছিলেন খানিক সোচ্চার কণ্ঠে। তিনি লেখেন, “এই হেমন্তে ফসলেরা বলেঃ কোথায় আপন জন?/ তারা কি কেবল লুকোনো থাকবে,/ অক্ষমতার গ্লানিকে ঢাকবে,/ প্রাণের বদলে যারা প্রতিবাদ করছে উচ্চারণ/ এই নবান্নে প্রতারিতদের হবে না নিমন্ত্রণ?”
সমাজের প্রতারিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন চিরকাল। তাদের কথা বলেছেন আপন ছন্দে। তিনি বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
এই সম্ভাবনাময় স্বল্পায়ু কবি বারবার জীবনের রসদ খুঁজে নিচ্ছেন দীর্ঘায়ু মহাকবির থেকে। ঠিক যেন সদ্য জন্মানো চারা নিজের ছায়া খুঁজে নিচ্ছে বুড়ো বট গাছের থেকে। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেও সেই তরুণ কবির আশ্রয় হয়ে উঠছেন প্রাজ্ঞ ঋষিতুল্য মানুষটি। সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন মার্কসবাদী। তা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন তাঁকে গভীরভাবে প্রেরণা জুগিয়েছিল। কবিগুরুর প্রতি তাঁর অমোঘ আকর্ষণ ছিল বলেই লিখে ফেলেছিলেন, “আমার প্রার্থনা শোনো পঁচিশে বৈশাখ / আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের”। ১৯৪১ সালে কলকাতা রেডিওর অনুষ্ঠান ‘গল্পদাদুর আসর’-এ যোগ দিয়েছিলেন সুকান্ত। প্রথমে তিনি রবি ঠাকুরের কবিতা পাঠ করেন সেখানে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর একই অনুষ্ঠানে পাঠ করেন নিজের কবিতা, যে কবিতার কেন্দ্রেও রবীন্দ্রনাথ।
কেবল সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেই নয়, চারপাশে ঘটে চলা শোষণ-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ইন্ধন তিনি পেতেন রবি ঠাকুরের থেকে। কবি সুকান্ত যখন যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, তখন দুনিয়া জুড়ে বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা, আর কলকাতায় তখন জাপানি হানাদার বাহিনীর আতঙ্ক। একদিকে প্রবল দুর্ভিক্ষ, আরেকদিকে বিশ্বযুদ্ধের সাইরেন, এরই মধ্যে অসুস্থ সুকান্ত ভেঙে না পড়ে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেই রবীন্দ্রনাথ মারা গেছেন, কিছু বিশ্বকবির সৃষ্টিসম্ভার রয়েছে একই রকম সজীব।
সেইসব গান-কবিতা-সাহিত্য অশুভ দানবকে রুখে দেওয়ার বার্তা দিয়েছে কিশোর কবিকে। সুকান্ত তখন লিখছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রতি’ নামের কবিতা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াকু হয়ে ওঠার প্রেরণা যে রবীন্দ্রনাথ, সেই কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠছে সেই বোধ। সুকান্তের গোটা জীবনের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ।
মুবার্তা/এস/ই