চৌগাছায় পাকা না হওয়ায় সড়কে ফের ধান লাগিয়ে দিয়েছে গ্রামবাসী।
যশোরের চৌগাছায় একটি সড়ক পাকা না হওয়ায় চার বছর পর একই সড়কে ফের ধান লাগিয়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। রাতের আধারে গ্রামের যুবকরা ওই সড়কটিতে ধান রোপন করেছে বলে জানিয়েছে গ্রামের নেতৃত্বস্থানীয়রা।
২৪ জুলাই শুক্রবার রাতের কোন এক সময়ে উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের নগরবর্ণি (বৃত্তিপাড়া) থেকে নগরবর্ণি (গুপীনাথপুর) সড়কের গুপীনাথপুর প্রবেশের মুখে সড়কের প্রায় ত্রিশ ফুট দৈর্ঘ্যে ধান রোপনের এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামটি নগরবর্ণি বাজার থেকে প্রায় ৫শ মিটার বর্ণি গ্রামের দিকে গিয়ে বৃত্তিপাড়া নামক স্থান থেকে কিছুটা ফ্লাট সোলিং গিয়ে এরপর থেকে কাঁচা। খানিকটা সড়ক এগিয়ে আর সাইকেল মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় না। মোটর সাইকেল রেখে প্রায় এক কিলোমিটার হেটে গ্রামের প্রবেশ মুখে গিয়ে দেখা যায় সড়কের উপরে চার থেকে পাঁচটি খন্ডে খন্ডে ধান লাগিয়ে রাখা।
সাংবাদিকদের দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দা বয়স্ক হাজি আব্দুল বারিক,তমিজ উদ্দিন, আব্দুর রব, হাশেম আলী শেখ, কলেজ শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান, গোলাম রাব্বানী, যুবক আক্তারুজ্জামান, নূর ইসলাম, স্বপন প্রমুখ।
এদের একজন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুজিদ। তিনি বলেন আমরা দু’জন মুক্তিযোদ্ধা এই গ্রামে বসবাস করি। গ্রামটিতে একটিই মাত্র রাস্তা। চার বছর আগে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বারবার রাস্তাটি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাজেট না থাকার অযুহাত দেখিয়ে রাস্তাটি করা হচ্ছে না। সমান্য বৃষ্টিতেই আমাদের গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই অতি সত্বর রাস্তাটি পাকা করে দেয়া হোক।
আরেকজন বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী তমিজ উদ্দিন বলেন দির্ঘদিন ধরে রাস্তায় কাদা হয়। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুল, কলেজে যেতে পারেনা। গাড়ি ঘোড়া চালানো যায় না। নির্বাচনের সময়ে চেয়ারম্যান তোতা মিয়া বলে গিয়েছিলেন এই রাস্তা করে দেবেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি এই গ্রামেই আসেন নি। এই রাস্তায় পা’ই দেন নি।
গ্রামের প্রবীন আওয়ামী লীগ কর্মী হাজী আব্দুল বারিক বলেন, চার বছর আগে রাস্তায় অতিরিক্ত কাদা হয়েছিল। স্কুলের ছেলেপেলেরা রাস্তায় ধান লাগিয়ে দেয়। তখন চেয়ারম্যান, মেম্বাররা এসে বলেছিল রাস্তা আমরা করে দেব। সোলিং হলেও করে দেব। কিন্তু তারা তা করেন নি। গত রাতে গ্রামের ছেলে পেলেরা আবার রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছে। তিনি বলেন তবে কারা লাগিয়েছে তা আমি দেখিনি।
গ্রামের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন চার বছর আগে একবার গ্রামের ছেলেরা ধান লাগিয়ে দেয়। তখন এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ আমাকে নিয়েই রাস্তাটি ভিজিট করেন। তখন তিনি বলেছিলেন রাস্তাটি প্রথমে আইডি করা হবে। তার পর করে দেয়া হবে। এরপর আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপজেলা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাই। তারা আমাদের আস্বস্ত করেন রাস্তাটি করে দেব। বৃত্তিপাড়া থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চাঁদনি আক্তারের নেতৃত্বে তৎকালীন এমপি সাহেবের কাছে গিয়েছি। তারা সবাই আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্ত রাস্তা করে দেন নি। আমরা এখন নিরুপায়। তাই রাতের আধারে গ্রামেরই কেউ রাস্তায় ধান লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন এই গ্রাম দিয়ে এই রাস্তা দিয়ে দুর্গাপুর, পুড়াদাহ, রাজাপুর, উসনিপাড়া, মান্দারতলা, রামকৃষ্ণপুরের লোকজন পুড়াপাড়া ও চৌগাছা শহরে যাতায়াত করি। অর্থাৎ আমাদের গ্রামটি মাঝখানের গ্রাম অথচ এই রাস্তাটিই হচ্ছে না। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রায় দশ বছর ধরে চেয়ারম্যান আছেন। তিনি প্রথম বার নির্বাচনের সময়ে আমাদের বলেছিলেন এই রাস্তাটি করে দেবেন। এই দশ বছরে তিনি তা করে দেন নি। তিনি দুর্গাপুরের দিক থেকে কিছু রাস্তা সোলিং করেছেন। তাছাড়া এই রাস্তায় কোন কালভার্ট নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়িগুলি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আমরা একাধিকবার মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট গিয়েছি। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেননি।
গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলার সময়ে সেখানে পৌছেন ওই গ্রামের মেম্বার আব্দুল আজিজ। তিনিও দুই মেয়াদে মেম্বার রয়েছেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাকে ইউএনও স্যার এখানে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি দেখে তাকে রিপোর্ট করার জন্য। চার বছর আগে গ্রামবাসির ধান লাগানোর সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন আমরা ওই পাশ থেকে রাস্তা আনছি। তিন কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রাস্তা হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ রাস্তা করবো। গ্রামবাসির যে কালভার্টের দাবি সেটা কি আপনি প্রস্তাব করেছেন প্রশ্নে তিনি বলেন আমি প্রস্তাব করবো।
জনতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মতিন মোবাইলে জানান বিষয়টি আমার জানা নেই। চার বছর আগে এখানে ধান লাগিয়েছিল গ্রামবাসি বললে তিনি বলেন এটাও আমার জানা নেই। রাস্তাটির আইডি কি হয়েছে প্রশ্নে তিনি বলেন এটাও আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।