আজঃ বৃহস্পতিবার ● ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২৫শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১৫ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● রাত ৯:৪৫
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

চৌগাছার সেই ঐতিহাসিক “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্তম্ভ”টি আজ বিলীন হতে চলেছে কপোতাক্ষ নদে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্তম্ভ, মুক্তারপুর-চৌগাছা- ফাইল ছবি

আব্দুল আলীম: একটু ইতিহাস ঘাটলেই জানা যায়- ১৯৫৪ সালেরে গ্রীস্মকালে নির্বাচনের আগে গোটা দেশব্যাপী সাংগঠনিক ও নির্বাচনী প্রচার অভিযান চলছে। ৭টি দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। যশোরে আসলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উঠলেন যশোর আওয়ামী’লীগের মহাপ্রাণ এ্যাডভোকেট মশিউর রহমানের বাসায়। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে আসলেন নির্বাচানের প্রচারে। দীর্ঘ সাংগঠনিক ও নির্বাচনী আলাপ শেষে সিদ্ধান্ত হল মশিউর রহমানের এলাকায় জনসভা করে (বৃহত্তর যশোর) জেলায় নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। সে মোতাবেক প্রস্তুতি। খবর দিলেন ঝিকরগাছা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর বকসী হাজিকে। জনসভা হবে চৌগাছার মুক্তারপুর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে। উজিরপুরের নুর বকসী হাজী খবর দিলেন আওয়ামী লীগের সিংহঝুলি ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও থানা সম্পাদক সামসুজ্জোহা ভাটাই বিশ্বাসকে। বাড়ী উজিরপুর লাগোয়া মুক্তারপুরে। সদা হৃদ্যতায়ভরা, এলাকায় জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ভাটাই বিশ্বাস খবর পেয়ে আপ্যায়ন এবং তাদেঁর বিশ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিলেন।
যশোর থেকে দুপুরে খাবার শেষে লক্কর বাসে চেপে সোজা ১৪ মাইল পশ্চিমে শহীদ মশিউর রহমানের গ্রামের বাড়ী সিংহঝুলী উঠলেন বঙ্গবন্ধু। নির্বাচনী প্রার্থী এডভোকেট মশিউর রহমান। প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ঝিকরগাছার এ্যাডভোকেট সামসুর রহমান। বাকী সফর সঙ্গী , এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন, এ্যাডভোকেট রওশন আলী, আবুল ইসলাম এবং নূর বকসী হাজী। ঝিকরগাছা সহ বিভিন্ন স্থানে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে প্রচার শেষে একটি ট্রাক, শত শত বাইসাইকেল, অগনিত গরুর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী এবং নৌকা যোগে যথাসময়ে মুক্তারপুর স্কুল মাঠে জমায়েত হলেন কৃষক ছাত্র জনতা। জনতার ঢল উপচে পড়া ভিড়ে নিঝুম নিভৃত মুক্তারপুর মুহুর্তে প্রণচঞ্চলতায় ভরে উঠল।
বঙ্গবন্ধু ও মশিউর রহমান দুইটা বাইসাইকেল যোগে উপস্থিত হলেন মুক্তারপুর ভাটাই বিশ্বাসের বাড়ীতে। নাস্তা ও খাওয়া শেষে স্কুল মাঠের বক্তৃতা মঞ্চে চলে গেলেন উভয় নেতা। স্কুল মাঠ কপোতাক্ষ নদের পাড়। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের বক্তৃতায় উঠে এল বাংলার মাটি, মানুষ, প্রকৃতির প্রভাব। এ মাটি কিভাবে বৃটিশবেনিয়া উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছিল, নব্য পাকিস্থানী উপনিবেশিক শক্তি কত বড়, নির্যাতনকারী, লুন্ঠনকারী, শোষক শ্রেণীর অভিভাবক। জনসভার সংবাদে চৌগাছা, ঝিকরগাছা এবং শার্শা এলাকায় বাঁধভাঙ্গা আনন্দের হিলেলাল চলছে। সাথে মুক্তারপুর এবং ভাটাই বিশ্বাসের ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের অধিবাসী ও পাশ্ববর্তী বিস্তৃর্ণ এলাকার জনগন। যুক্তফ্রন্টের ঐ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঝিকরগাছা থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব শামসুজ্জোহা ভাটাই বিশ্বাস। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী এডভোকেট মশিউর রহমান এর হৃদয়গ্রাহী বক্তব্যে মুহুর মুহুর করতালীতে জনসভা মুখরিত হয়ে উঠে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বাভাব সুলভভঙ্গীতে উপস্থিত নরনারীর হৃদয়ের পুঞ্জুীভূত বেদনা, শিক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি সংস্কৃতি, শোষণ-বঞ্চনার গভীর দর্শন উপস্থাপন করেন ২১ দফার আলোকে। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিপ্লবী নেতাদের আগমন বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন পুর্ণিমার চাঁদ যেন হাতের মুঠোয় ঝলসাচ্ছে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ আজও ভোলেনি চৌগাছার মুক্তারপুর গ্রামের মানুষ, ভোলেনি ইউনবাসী, ভোলেনি সমগ্র চৌগাছা-ঝিকরগাছাবাসী।সেই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ১৯৯৯ সালে সরকারিভাবে মুক্তারপুর গ্রামে তৈরি হয় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্তম্ভ”। দেশ স্বাধীনের পূর্বে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন এই মু্ক্তারপুর গ্রামে। যার স্বরনার্থে এখানে নির্মীত হয়েছে এই স্মৃতি স্তম্ভটি। এই স্মৃতি স্তম্ভমটির জন্য মুক্তারপুর গ্রামবাসীসহ সমগ্র উপজেলাবাসী গর্বিত।  এজন্য যে, তারা জাতির জনকের পদধূলি পেয়েছিলেন। মুক্তারপর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসী এই স্মৃতি সৌধ দেখে জাতির জনককে গভীর ভাবে মনে রাখতে সক্ষম হয়েছে। মনে রাখতে পেরেছে অতীতের ইতিহাস। পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানকার কচি কচি মুখগুলো বুঁঝতে শিখেই এই স্মৃতি স্তম্ভটি দেখে মনের অজান্তে শিক্ষকসহ নানান জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জানতে পারছে সৃতি স্তম্ভের ইতিহাস, জানতে পারছে দেশের মানুষের সেই কষ্টে ভরা পাকিস্তানী আমলের ইতিহাস। ঘৃণাভরে দেখছে সেই বর্বরতাকে আকড়ে ধরা পাকিস্তানী সরকারকে, মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে থাকা দেশে লুকিয়ে থাকা রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের। এটাই তো দরকার, এটায় তো শিক্ষা। যার বদৌলতে আজকের স্বাধীন দেশ, যার বদৌলতে আজকের এই ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা। তাকে আমরা কিভাবে মনে রাখছি, কিভাবে তার কথা স্মরণ করছি, কিভাবে নতুন প্রজন্ম তার ইতিহাস জানছি, কিভাবে তাকে সম্মানের চোখে দেখছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে যার সামান্য স্মৃতি, ভালোবাসা, সম্মান, ঐতিহ্য, ভূমিকা, ইতিহাস ধরে রাখতে এই স্মৃতি স্তম্ভগুলি। তার একটি উপজেলার ধূলিয়ানী ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এবং মাইকেল মধূসুদন দত্তের স্মৃতি বিজোড়িত কপোতাক্ষ নদের পাশেই অবস্থিত। স্মৃতি স্তম্ভটির নাম “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্তম্ভ”। কিন্তু এটি নদের পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে স্তম্ভটির গোড়ার মাটি ভাঙন ধরেছে। খুব দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণের কার্যক্রম শুরু না করলে অচিরেই নদে বিলীন হয়ে যেতে পারে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি স্তম্ভ”টি।
এলাকাবাসীর চাওয়া, প্রাশাসনিক ভাবে এই স্তম্ভটির চারিদিকে বেশি জায়গা জুড়ে মাটি ভরাট দিয়ে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অন্যান্য সৌন্দর্য বৃদ্ধিমূলক ব্যবস্থাকরণ। কারণ এটি দেশ, জাতি, সমাজ, গোষ্ঠী ও প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য ইতিহাস, ঐতিহ্য, গর্ব।
মুবার্তা/এস/ই/আ-আলীম

ফেসবুকে লাইক দিন