আজঃ শুক্রবার ● ২৯শে চৈত্র ১৪৩০ ● ১২ই এপ্রিল ২০২৪ ● ২রা শাওয়াল ১৪৪৫ ● রাত ৯:০৮
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

যশোর থেকে হারিয়ে গেছে ব্রাহ্মণনগরের নাম

ফাইল ছবি

সাজেদ রহমানঃ যশোর থেকে হারিয়ে গেছে ব্রাহ্মণনগরের নাম……
মুকুট রায়ের রাজধানী ব্রাহ্মণনগর বাংলাদেশের মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেখানে এখন লাউজানী গ্রাম। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে লাউজানীর অবস্থান। মুকুট রায়ের প্রাসাদ, মন্দিরের ধ্বংসবশেষ ১০০ বছর আগেও ছিল। ওই ধ্বংসস্তুপে এক সময় পাওয়া গিয়েছিল নানা দেবদেবীর মূর্তি। ছিল পাড়বাঁধান একটি দীঘি। কাছেই আছে গাজীর দরগাহ। কিংবদন্তী, গাজী ও কালু একদা বর্তমান যশোর জেলার ব্রাহ্মণনগরের হিন্দু রাজা মুকুট রায়ের রাজ্যে উপস্থিত হলেন এবং এখানে মুকুট রায়ের অপরুপা সুন্দরী কন্যা চম্পাবতীর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। একজন রুপসী হিন্দু রাজকন্যার প্রতি গাজীর সন্মান প্রদর্শন ও গাজীর ব্যাক্তিত্ব দেখে গাজীর প্রেমে পড়ে গেলেন রাজ কন্যা চম্পাবতী। এই চম্পাবতীর ছিলো সাত ভাই। বিখ্যাত সেই গান ‘সাত ভাই চম্পা জাগোরে’ এই সেই চম্পাবতী যার পরিবারের ইতিহাসে অনুপ্রাণিত হয়ে সাত ভাই চম্পা রুপকথাটি ঠাকুমার ঝুলিতে লেখা হয়েছিলো !
কালূর মারফত চম্পাবতীর প্রেমের খবর গাজী জানতে পারলেন, গাজীর ভেতরেও রাজকন্যা চম্পাবতীর প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক হলো এবং তিনি বিয়ের প্রস্তাব স্বরুপ তার ভাই কালুকে মুকুট রাজার প্রাসাদে পাঠালেন। কিন্তু রাজা মুকুট রায় ক্রোধে ফেটে পড়লেন। সামান্য এক দরবেশ বিয়ে করতে চাইছে তার মতো ধনবান এক রাজার কন্যাকে ! মুকুট রায় প্রস্তাব প্রত্যাখান করে কালুকে বন্দি করলেন।
এই খবর গাজীর কাছে পৌছানোর পরে গাজী ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পড়লেন। কারন কালু ছিলো তার দরবেশ জীবনের ভালোবাসার পরিবারের এক মাত্র অবলম্বন ! মুকুট রায়ের কারাগার হতে ভাই কালুকে মুক্ত করতে একা রওনা হলেন গাজী, কিন্তু অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো। সুন্দরবনের বাঘ,কুমিরসহ অন্যান্য সকল পশুপাখি ছিলো দরবেশ গাজীর অনুরক্ত! ভাইকে মুক্ত করতে রওয়ানা হওয়া গাজীর পেছনে পশুপাখি লাইন লেগে গেল এবং সুন্দরবনের পশুপাখিদের এই স্রোত সাথে নিয়ে ঝড়ের বেগে এগিয়ে চললো দরবেশ গাজী !
গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ-এর বিস্তারিত ইতিহাস পড়লে এই ঘটনার ব্যাপারে কিছূটা ধারনা পাওয়া যায়। জানা যায়, সুলতান হোসেন শাহও তার সৈন্যবাহিনী প্রেরন করেছিলেন গাজীর পক্ষে। এই গৌড় হচ্ছে বাংলার এককালীন রাজধানী। যার অবস্থান বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এটি লক্ষনাবতী নামেও পরিচিত। প্রাচীন এই দুর্গনগরীর অধিকাংশ বর্তমানে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদাহ জেলায় এবং কিছু অংশ পড়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
যাই হোক গাজী ও তার পশু পাখী বাহিনীর মোকাবেলার জন্য রাজা মুকুট রায় সৈন্য তৈরি করে প্রেরন করল এবং তারা গাজীকে ব্রাক্ষণনগর সংলগ্ন “খনিয়া” এলাকায় বাঁধা দিলেন। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম ধাক্কায় মুকুট রায়ের সৈন্য বাহিনী ধুলোর মতো উড়ে গেলো। কারন গাজীর পক্ষ্যে যুদ্ধ করেছিলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমিরসহ আরও নানা ধরনের প্রানী।
এ সময় মুকুট রায় তার প্রধান সেনাপতি দক্ষিণ রায়কে প্রেরন করলেন। তিনি ছিলেন অলৌকিক শক্তিতে পারদর্শী। কিন্তু দক্ষিণ রায় গাজীর নিকট পরাজয় স্বীকার করেন ও দীক্ষা গ্রহন করেন।
যুদ্ধে পরাজয়ের খবর শুনে মুকুট রায় আত্মহত্যা করেন। পরে গাজী ও চম্পবতীর বিয়ে হয়। তাদের দুটি ছেলে সন্তান হয়, দুঃখী গাজী ও মেহের গাজী।
বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার বিশাগাঁও গ্রামে গাজীর মাজার রয়েছে। চম্পাবতীর কবর আছে সাতক্ষীরা জেলার লাবসা গ্রামে। আবার ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বাদুরগাছা গ্রামে গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার আছে।
একই ব্যাক্তিদের ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় মাজার থাকার বিষয়টা বিভ্রান্তি সৃস্টি করে থাকে। তবে ইতিহাস থেকে যেটা নিশ্চিত হওয়া যায়, ঝিনাইদহ জেলার বারোবাজারের নিকটবর্তী বাদুরগাছা মৌজায় গাজী-কালু ও চম্পাবতীর মাজার গুলোই আসল। ছবি: লাউজানী রেল ক্রসিং। সূত্র-ফেসবুক আইডি/সাজেদ রহমান

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন