By মুক্তি বার্তা
সেই ড্রাইভার মালেকের একটি দরজার দাম ৫ লাখ টাকা
নিউজ ডেস্কঃ দরজায় রাজকীয় কারুকাজ, পুরোটাই যেন আদুরে হাতে গড়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ দরজা বানাতেই দক্ষ মিস্ত্রির সময় লেগেছিল পুরো এক বছর!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে দরজা নিয়ে এতো আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে, সেটির কথাই বলা হচ্ছে। রিমান্ডে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আব্দুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেকের একটি ফ্ল্যাটের দরজা এটি। এই দরজার দাম শুনলে চমকে উঠবেন যে কেউই। পাঁচ লাখ টাকা দিয়েই বানানো হয়েছিল ওই দরজা।
সোমবার সরেজমিনে টঙ্গীর তুরাগের বামনেরটেক রমজান মার্কেট সংলগ্ন মালেকের বিলাসবহুল হাজী কমপ্লেক্সে গিয়ে এমন তথ্যই মিলেছে।
বাসার মূল দরজা সম্পর্কে জানতে চাইলে মালেকের ছোট মেয়ে মিমি বলেন, এক বছর ধরে এখানকার স্থানীয় মার্কেটের মান্নান নামের এক কাঠমিস্ত্রী এটি বানিয়েছেন। ওই মিস্ত্রি আমাদের কয়েকটা দরজার ছবি দেখিয়েছিলেন, আমরা এর মধ্য থেকে এ দরজাটিই পছন্দ করেছিলাম।
দরজাটি তৈরি করতে এতো সময় আর অর্থ ব্যয় হলেও এটিকে একটি সাধারণ কাঠের দরজা বলেই দাবি করেন মালেকের মেয়ে মিমি! তিনি বলেন, এটা একটা সাধারণ কাঠের দরজা, কোনো বিদেশি দরজা নয়।
দরজাটির পেছনে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে- সে বিষয়টি জানতে চাইলে এড়িয়ে যান মিমি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটি আমার বাবা জানেন।
তবে রাজধানীর দরজা তৈরিকারক দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, এই দরজা তৈরি করতে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।
উত্তরার থ্রি-স্টার প্লাস্টিক ডোর-২ এর ম্যানেজার রুবেল হোসেন বলেন, বার্মাটিক কাঠের এ দরজা বানাতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার উপরে লাগবে।
আর আল-মক্কা ডোর সেন্টারের ম্যানেজার টিটু বলেন, বার্মাটিক এ দরজাটির পেছনে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। কাঠের মানের ওপর নির্ভর করে দাম কম-বেশি হতে পারে।
স্থানীদের কাছ থেকে জানা গেছে, হাজী আব্দুল মালেককে সবাই ‘বাদল ভাই’ বলেই এলাকায় জানতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। তার তিন মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
র্যাব জানায়, আব্দুল মালেক দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছেন। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্যতা উঠে আসে। একজন তৃতীয় শ্রেণির সাধারণ কর্মচারী হয়েও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে বলে জানা যায়।
রোববার র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, মালেক পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন চালক। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে চালক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে চালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জালনোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, তার স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বিলাসবহুল ভবন, ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় সাড়ে চার কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন রয়েছে।
এদিকে সোমবার অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দুই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক আব্দুল মালেকের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে রোববার সকালে রাজধানীর কামারপাড়ায় তার ওই বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আব্দুল মালেককে গ্রেফতার করে র্যাব।
মুবার্তা/এস/ই