আজঃ রবিবার ● ১৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ● ১লা ডিসেম্বর ২০২৪ ● ২৮শে জমাদিউল-আউয়াল ১৪৪৬ ● বিকাল ৩:৩৫
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

বরিশালে বৃদ্ধাকে চুল কেটে নির্যাতন

ফাইল ছবি

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া( বরিশাল ) প্রতিনিধি : বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানার আন্দারমানিক গ্রামে বসতভিটা থেকে উৎখাত করতে সফুরা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ওই এলাকার সেকান্দার আলী হাওলাদার ও তার দুই ছেলে নেতৃত্ব দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর আগরপুর রোড  শহীদ আঃ রব সেরনিয়াবাত  বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার সফুরা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে সফুরা বেগমের মেয়ে সোনিয়া আক্তারসহ কয়েকজন স্বজন উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে তারা নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সফুরা বেগম মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজীরহাট থানার আন্দারমানিক গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নান সরদারের স্ত্রী ।

সফুরা বেগম বলেন, আন্দারমানিক গ্রামের সেকেন্দার আলী হাওলাদার জমি বিক্রির প্রস্তাব দিলে তার কাছ থেকে ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ১৮ শতাংশ জমি ক্রয় করি। এরপর সেখানে টিনের চালা দিয়ে ঘর বানিয়ে ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করি। চুক্তি অনুযায়ী সেকান্দার আলীর কাছ থেকে জমির দাম বাবদ সব টাকা পরিশোধ করলেও তিনি দলিল দিতে টালবাহানা শুরু করেন।

প্রায় ১৬ বছর ধরে জমির দলিল রেজিস্ট্রির কথা বলে সেকান্দার আলী ঘুরাচ্ছিলেন। গত জুন মাসে তাকে জমির দলিল না করে দিলে টাকা ফেরতের কথা বলি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেকান্দার আলী আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে গত ১৫ জুন সেকান্দার আলী হাওলাদার ও তার দুই ছেলে সহিদ হাওলাদার এবং তৌহিদ হাওলাদারের নেতৃত্বে ৯/১০ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা আমাকে বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। বাধা দিলে আমাকে লাঠি সোটা দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দেন। এরপর তারা উল্লাস করতে থাকেন। চিৎকার দিলে ফের পেটাতে থাকেন। তাদের লাঠির আঘাতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তখন রক্ত ঝরছিল। তবে তাদের ভয়ে আমাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসছিল না। এরপর ভারি ও শক্ত কিছু দিয়ে ডান পায়ে তারা কয়েটি আঘাত করে। এতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি আমাকে তারা মৃতভেবে সেখান থেকে চলে গেছেন।

সফুরা বেগমের মেয়ে সোনিয়া আক্তার বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা অমানবিক ও মধ্যযুগীয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলে পুলিশ মৃত বলে ঘোষণা করে। থানা থেকে ফেরার পথে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর গত সপ্তাহের শেষ দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসি। ভাগ্যগুনে বেঁচে গেলেও আমার মা এখন পঙ্গু। হামলার পর আমার ভাই আরিফুর রহমান বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। মামলার পর হামলাকারীদের অব্যাহত হুমকির মুখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মামলা তুলে নিতে আমি ও আমার মাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

সোনিয়া আক্তার বলেন, সেকান্দার ও তার ছেলেরা এলাকায় প্রভাবশালী। তাদের টাকা পয়সা আছে। তারা এমন কোনো কাজ নেই করতে পারেন না। মামলা করে তাদের আরও রোষানলে পড়েছি। তদের লোকজন আমাকে পথে ঘাটে হয়রানি ও অপদস্ত করছে। হত্যার হুমকি ও নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আমাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

কাজীরহাট থানা পুলিশের ওসি মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ওই নারীর ওপর হামলার ঘটনায় সেকান্দার আলী হাওলাদার ও তার দুই ছেলেসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে ইতোমধ্যে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তাছাড়া বাদীপক্ষকে হুমকি দেয়া হচ্ছে, এমন কোনো মৌখিক অভিযোগও পাওয়া যায়নি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন