আজঃ বৃহস্পতিবার ● ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ● ১৬ই মে ২০২৪ ● ৭ই জিলক্বদ ১৪৪৫ ● সকাল ৯:০৭
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের জের ধরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পুনর্নিমিত ছাত্রাবাস উদ্বোধন করা হয়।

এরপর থেকে ছাত্রলীগই এককভাবে ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের বসবাস নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের পছন্দ-অপছন্দেই সাধারণ ছাত্রদের থাকার সুযোগ পাওয়া নির্ভর করতো। শুক্রবার ছাত্রাবাসের যে ব্লকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেখানে নির্মিত ‘নতুন ভবনটি’ ছাত্রলীগেরই দখলে ছিল। এই ভবনের পাশে তত্ত্বাবধায়কের বসবাসের জন্য নির্ধারিত বাংলোয় প্রভাব খাটিয়ে বসবাস করতো ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি সাইফুর রহমান। শনিবার ভোরে তার কক্ষে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর ছাত্রাবাস খোলার পর থেকে বিভিন্ন কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যেও বিরোধ ছিল। এজন্য বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রপের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রাবাসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন কিছুদিন বন্ধ ছিল ছাত্রাবাস। গত বছরের ৬ আগস্ট রাতে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের কক্ষ দখল নিয়ে ফের ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়। ওই সময়ও কিছুদিন ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। এরপর গত ২৫ মার্চ থেকে করোনার কারণে ছাত্রাবাস বন্ধ রয়েছে।

বন্ধের পর আবাসিক ছাত্ররা যার যার বাড়ি চলে যান। আর এই ফাঁকা পরিবেশকে নিজেদের নানা অপকর্মের জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী কতিপয় শিক্ষার্থী ও তাদের বহিরাগত সঙ্গীরা। তারা প্রভাব খাটিয়ে বন্ধের সময়েও ছাত্রাবাসে বসবাস করছেন।

স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পরে ছাত্রাবাসের এসব কক্ষে চলে মদ-জুয়ার আসর। ছিনতাই-চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্মের পরিকল্পনা, ভাগ-বাটোয়ারাও এখানে বসে হয়। ছিল অস্ত্রের মজুদও। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজ এলাকায় বেড়াতে যাওয়া এক নব দম্পতিকে তারা ঘিরে ধরে। পরে তাদের ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকে নিয়ে স্বামীকে একটি কক্ষে আটকে পাশের কক্ষে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। মধ্যরাতে পুলিশ ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে।

শনিবার সরেজমিনে ছাত্রাবাস এলাকায় গিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।

ছাত্রাবাস সংলগ্ন বালচুর বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি রাতে ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ শোনা যেত। এখানে মদ-জুয়ার আসর বসাত তারা। শুক্রবার রাতেও এরকম হৈচৈ শোনা গেলেও প্রথমে কেউ তেমন পাত্তা দেয়নি। তারা মনে করেছিলেন, প্রতি রাতের মতো আজো হয়তো মদের আসর বসেছে। পরে নারীকণ্ঠের চিৎকার শুনে তারা এগিয়ে গিয়ে এই নির্মম ঘটনা দেখতে পান।

ছাত্রাবাস বন্ধ থাকার পরও কীভাবে এখানে ছাত্ররা বসবাস করছে তা নিয়েই এখন সিলেটজুড়ে সব মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাসের তত্ত্বাধায়ক বলেছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, কিছু গরীব ছাত্রকে মানবিক বিবেচনায় থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা টিউশনি কিংবা ছোট চাকরি করে লেখাপড়ার খরচ চালায়।

ধর্ষণ ঘটনার পর শনিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ বন্ধ ছাত্রাবাসকে ফের বন্ধ ঘোষণা করে। শনিবার দুপুরের মধ্যে সবাইকে ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দেয় তারা।

এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রবাসের তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিন বলেন, কিছু ছাত্রকে মানবিক কারণে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।

রাজনৈতিক প্রভাবে এরা ছাত্রাবাসে ছিল কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেরকম কিছু নয়।

কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, বন্ধের মধ্যে কীভাবে ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ পেয়েছিল তা ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কই ভালো জানেন। তবে ঘটনার পর শনিবার আমি জানতে পারি, মানবিক কারণে এদের থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ধর্ষণে জড়িত ছাত্রদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। কলেজসূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের দখলে। ছাত্রদের পাশপাশি অনেক অছাত্রও এখানে আস্তানা গেড়েছে। ছাত্রাবাসের ভেতরে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। টিলাগড় এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ, রনজিত সরকারসহ কিছু নেতার প্রশ্রয়ে এরা বেপরোয়া। বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত এসব ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীরা নানা অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রাণও গেছে অনেকের।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন