By মুক্তি বার্তা
পরিত্যক্ত চুলকে জীবীকার উৎস বানিয়েছে হাজারও গ্রামীণ নারী-পুরুষ
নিউজ ডেস্কঃ নারীরা মাথা আঁচড়ানোর পরই উঠে আসা চুল ফেলে দেন। অনেক নারী সেই উঠে আসা চুল জমিয়ে রাখেন। অনেকে বিউটি পার্লারে গিয়েও চুল কাটান। এসব চুল কেনেন ফেরিওয়ালারা। পরিত্যক্ত এসব চুলকে জীবীকার উৎস বানিয়েছে হাজারও গ্রামীণ নারী-পুরুষ।
পরিত্যক্ত চুলকে ঘিরে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের মশিদপুর, হোসেনপুর ও কবুলপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক চুল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র। এসব কারখানাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষের। বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়েছেন বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী। পাল্টে গেছে এলাকার অনেক তরুণের ভাগ্য।
উপজেলার মশিদপুর ও হোসেনপুর গ্রামের দুটি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে ২০ থেকে ২৫ জন নারী কর্মীরা মেঝেতে বসে চুলের জটা বা গুটি থেকে সুঁচ বা কাটা দিয়ে জট ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ জট ছাড়িয়ে নেওয়া এসব চুল হুইল পাউডার ও পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন।
কেন্দ্রগুলোতে কাজ করা নারী শ্রমিকরা জানান, কারখানায় গুটি কিংবা জটা থেকে চুল ছাড়ানোর দৈনিক ৭ ঘণ্টা কাজ করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পেয়ে থাকেন। এতে করে মাসে ১৫০০ থেকে ২০০০ আয় করে থাকেন তারা। তারা জানান, যারা এ পেশায় কাজ করেন তারা মূলত গ্রামের দরিদ্র নারী।
যা আয় করেন তা দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ এবং তাদের চাহিদা মেটানো হয়। তাদের দাবি মজুরি বৃদ্ধিসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের পাশে যেন এগিয়ে আসেন স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
১৫ বছর আগে ঢাকার বাসিন্দা চাঁন মিয়া নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে এ এলাকায় শুরু হয় পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসা। শুরুটা একজনের মাধ্যমে হলেও বর্তমানে এখন এ ব্যবসার সঙ্গে অর্ধশতাধিক উদ্যোক্তা জড়িয়ে পড়েছেন। এলাকার অনেক বেকার তরুণ ও যুবক ঝুঁকছেন এ ব্যবসায়। মেহেরপুর জেলা থেকে এসে তিন বছর ধরে উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে চুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন মিলন হোসেন ও জুয়েল রানা নামে দুই যুবক।
মিলন হোসেন জানান, তিন বছর আগে দুটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে তিনি ও জুয়েল রানা নামে আরেক যুবক চুল প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা গড়ে তোলেন। তাদের কারখানা থেকে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি প্রক্রিয়াজাত করা চুল বিক্রি হয়। প্রতি মাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। কর্মীদের বেতন, বাড়ি ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মাসে তাদের ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত চুল প্রক্রিয়াজাত করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না, অন্যদিকে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন এলাকার বেকার তরুণ-যুবক উদ্যোক্তারা।
এসব চুল ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য তাদের সবাইকে ট্রেড লাইসেন্স করে দেওয়া হয়েছে। তবে স্বল্প সুদে কিংবা সুদমুক্ত শর্তে ঋণ পেলে ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করার সুযোগ পেতেন এসব ব্যবসায়ী।
তিনি জানান, অহেতুক যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন যাপন করছেন তাদের এই চুল কারখানায় শ্রমিকের কাজে যোগদানের বিষয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে খুব তারাতারি আলোচনা করা হবে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, চুলের মতো পরিত্যক্ত জিনিসকে নিয়ে কিছু মানুষ অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার যে পথ বেছে নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমাদের কাছে এলে এসব উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের ব্যবসা আরও প্রসারিত করতে সহজ শর্তে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
চুল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এ ব্যবসা বৈধ হওয়া সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিত্যক্ত এ চুল কিনে আনতে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানাভাবে হয়রানি করে এবং তাদের থেকে চাঁদা আদায় করে।
মুবার্তা/এস/ই