আজঃ শনিবার ● ২৩শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ● ৭ই ডিসেম্বর ২০২৪ ● ৪ঠা জমাদিউস-সানি ১৪৪৬ ● সন্ধ্যা ৬:৫৬
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

বানারীপাড়ায় বিএড এমএ  ও এমএড’র সার্টিফিকেট জাল করে চাকরি নেওয়া সেই প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

ফাইল ছবি

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি॥ অবশেষে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ধারালিয়া সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়া সেই  প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এমএ,বিএড ও এমএড পরীক্ষার দু’টি  বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের  জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রমানিত হওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে  তাকে এ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খান এতে সভাপতিত্ব করেন। ওই সভায় প্রধান শিক্ষক  মোঃ জাহাঙ্গির হোসেনকে  সাময়িক বরখাস্ত করে সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আমিনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ধারালিয়া  সৈয়দ বজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খান জানান ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষকের পদে চাকুরী নেন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের  সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তার এবং একাধিক সদস্যের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের সার্টিফিকেট দেখে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে ২০১৯ সালের  ১৮ আগস্ট বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের  সভাপতি হিসেবে তিনি প্রধান শিক্ষকের সার্টিফিকেট সঠিক কিনা তা যাচাই করতে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং দারুল ইহসানের বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ওই বছরের  ১৫ সেপ্টেম্বর রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহামুদা বেগম,প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনের ২০০৭ সালের ফলাফল সেমিষ্টার ও ইংরেজিতে এমএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৪২’র সার্টিফিকেট জাল বলে লিখিতভাবে জানান। এছাড়াও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্য বিষয়ে এমএ  বর্তমানে নেই পূর্বেও ছিলোনা বলেও জানানো হয় । অথচ প্রধান শিক্ষক ওই বিষয়ে এমএ’র সার্টিফিকেট দাখিল করে চাকরি নেন। অপরদিকে ঢাকার দারুল ইহসান থেকে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন পরীক্ষা দেননি তা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খানকে জানান।  এদিকে জানা গেছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬ সালের পূর্বে ভর্তি হয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট বৈধ বলে গণ্য হবে। এর পরের সার্টিফিকেট  অবৈধ।

অথচ  প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮ সালের বিএড ও ২০০৯ সালের এমএড পাসের  সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন। যা ইউজিসি’র তথ্য মতে সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রধান শিক্ষক মো জাহাঙ্গীর হোসেন এসব জাল সার্টিফিকেট তৈরী করে নিজেই ভুয়া সিল দিয়ে তা সত্যায়িত করে দাখিল করেন  এবং  প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি পেতে বিএড সনদ বাধ্যতামূলক হলেও সেই সনদই জাল বলে অভিযোগ ওঠে। এর পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক পদে চাকরির জন্য পূর্বের যে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন মাদ্রাসার সেই অভিজ্ঞতার সনদও তিনি জাল করেন। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করাকালীণ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন কিভাবে বেসরকারী দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস করলো ও পরীক্ষা দিলো সে বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে।  অভিযোগ রয়েছে ভুয়া রেজুলেশন তৈরী করে তিনি নিজেকে নিয়মিত শিক্ষার্থী দেখান।

এসব অভিযোগের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. তারিকুল ইসলাম খান ঝালকাঠির শাহ মাহমুদিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদারকে আহবায়ক,চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজিম সরদার ও বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মতিয়ার রহমানকে সদস্য করে  তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই সত্য। এদিকে জাল-জালিয়াতি করে এতোদিন চাকরি করে তিনি যে বেতনা-ভাতা সহ সুয়োগ সুবিধা ভোগ করেছেন তা ফিরিয়ে দেওয়াসহ তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি   জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকসহ শিক্ষা সচেতন মহল।

অপরদিকে এমএ ও এমএড পরীক্ষার সনদের ওপর ভিত্তি করে তাকে বিভিন্ন সময় কৈফিয়ত তলব ও হয়রানী করার অভিযোগ এনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বরিশালের উপ-পরিচালক,বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক,বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, রূপালী ব্যাংকের বানারীপাড়ার শাখা ব্যবস্থাপক,বিদ্যালয়ের সভাপতি ও  কমিটির সকল সদস্যসহ ১৮ জনকে বিবাদী করে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বরিশাল সহকারী জজ আদালতে ২১ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেন।

তবে মামলা দায়েরের পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতির মেইলে দুটি সনদ ভুয়া সত্যতা স্বীকার করে এগুলো তার অতিরিক্ত যোগ্যতা প্রদর্শণগত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি পাঠান। যা গোপন রাখতে তিনি সভাপতিকে বিনীত অনুরোধও জানান।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন