আজঃ বৃহস্পতিবার ● ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২৫শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১৪ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● রাত ১:৫৮
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

মিন্নিসহ ফাঁসি ছয়, কার্যকরের পরে ইন্না লিল্লাহি..রাজিউনও না

ফাইল ছবি

সোহেল সানিঃ সমাজে একটি হত্যা আরেকটি হত্যাকে উৎসাহিত করে। রিফাত হত্যার পর অগণিত হত্যা সংঘটিত হয়েছে শুধু পরকীয়ার জের ধরেই। এই সময়ে রিফাত হত্যা মামলার রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যার রায় ঐতিহাসিকও বটে। রায়ে সন্তোষের জোয়ারে ভাসছে দেশ। উদ্বেলিত সারাদেশের মানুষ। রায়ে বরগুনার মানুষও খুশী। বিজ্ঞ মহল রায়কে বলছে অসাধারণ। ফেইসবুকসহ সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রায় নিয়ে স্ট্যাটাস। গণমাধ্যম রায়কে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করছে। আদালত হত্যার শিকার হওয়া  রিফাতের স্ত্রী মিন্নির ফাঁসি নিয়েই আলোচনা সর্বত্র। কারণ মিন্নি সুচতুরভাবে প্রথমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য দেশবাসীকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখেছিল। দোটানায় পড়েছিল পুলিশ প্রশাসনও।

মিন্নি নিজে বাবাকে নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ করেছিল তা নবাবী ইতিহাসের ধূর্ত ঘষেটি বেগমকেও হার মানিয়েছে। হোসেন কুলীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন ও মীর জাফরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভাইয়ের ছেলে সিরাজুদ্দৌলা হত্যাকে তরান্বিত করেছিল। মীর জাফরের পুত্র মীরন মোহাম্মদ আলী বেগকে দিয়ে হত্যা করায় সিরাজকে। আর  নিজের হাতে মারেন ঘষেটি বেগমকে। নদীর মাঝখানে নিয়ে নৌকার পাটাতন খুলে দিলে ঘষেটি বেগমের সলিল সমাধি ঘটে। অপরাধ কাউকে ক্ষমা করে না। মিন্নিকেও ক্ষমা করেনি। মিন্নি আরেক স্বামীকে দিয়ে রিফাতকে হত্যা করায়। আবার হত্যাকালে আরেক স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা চালায়। রিফাতকে হাসপাতালেও নিয়ে যায়। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও ফুটেজ দেখে গোটা জাতি  বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে পড়ে।

মিন্নির বাবা মিডিয়ার সামনে মেয়েকে নির্দেশ দাবি করে যে মায়াকান্নার নাটক মঞ্চস্থ করেন তা রীতিমতো সিনেমার ভিলেনকেও হার মানায়। কিন্তু “আইনের হাত অনেক লম্বা” সেই পুরানো প্রবাদই সত্য হলো। বিজ্ঞ বিচারক যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আমলে নিয়ে মিথ্যার মূল উৎপাটন করে চাপা সত্যকে বের করে এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। সকল রাষ্ট্রে, প্রত্যেক সমাজে অপরাধ সংঘটিত হয়। হবেই কিন্তু থাকতে হবে সুবিচার। তা নাহলে সমাজ বাসউপযোগী থাকবে না। অপরাধের বিচার হলে অপরাধীর শাস্তি হলেই কেবল  অপরাধের সংখ্যা কমে আসবে। তবেই আইন ও বিচারের প্রতি ভয়সুলভ শ্রদ্ধা বাড়বে। মানব হত্যাকে পবিত্র কুরআনসহ সকল ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে অমার্জনীয় অপরাধ এবং মহাপাপ। মানব হত্যাকারীরা জাহান্নামে বা নরকের আগুনে জ্বলবে। মানে ইহলোকের আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত রিফাতের হত্যাকারীদের পরলোকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বা ঈশ্বরের  আদালতে। ইহলোকে বিচারের মুখোমুখি হলেও রায় ঘোষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আসামীরা কারাগারে খুব একটা কষ্টে ছিলেন না।

কোনপ্রকার নির্যাতন ভোগ করতে হয়নি আসামীদের। কিন্তু সামনে আসছে আসামীদের কনডেম সেলে ঢুকতে হবে। টের পাবে কেয়ামতের আলামত।  ভুক্তভোগীসহ মানুষ এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। তারা আশা করছে, নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যদন্ডাদেশের ডেথ রেফারেন্স পর্বটি উচ্চআদালত হাইকোর্ট দ্রুত নিষ্পত্তি করে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখবেন। তারপরই সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় মঞ্জুর করবেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরার মাধ্যমে ইহলোকের শাস্তিদানের শেষপর্ব অনুষ্ঠিত হবে এবং  হত্যাকারীদের কবরস্থ করা হবে। এতেই পার পাবে না তারা। শুরু হবে পরলোকের শাস্তি। দোজখের তান্ডব। মুসলিম বলে তারপরও কি “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন” বলা হবে? যদি তাই বলা হয় তা হবে আল্লাহর কাছে হত্যাকারীদের পক্ষে জান্নাতবাসী  করার কামনা করা। নিশ্চয়ই মানুষ তা করতে পারে না। কারণ এরা মানবতার শত্রু, আল্লাহর শত্রু। দৈহিক অর্থে এরা একটি মানুষ হত্যা করলেও প্রকারান্তরে আরও হত্যাকে উৎসাহিত করেছে। সমাজে একটি হত্যা আরেকটি হত্যাকে পথ দেখায়। সমাজ নিরাপদ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই রাষ্ট্র।

জানমাল রক্ষার জন্য সংবিধান হলো রক্ষাকবজ। আর তা লঙ্ঘিত হলেই প্রতিকার পেতেই ভুক্তভোগী মানুষের আস্থাস্থল থানা প্রশাসন এবং বিচারিক  আশ্রয়স্থল আদালত। সুবিচার প্রাপ্তি প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র তবেই নিরাপদ, তবেই সভ্য। শোষিত, নিপীড়িত সমাজ ব্যবস্থা বদলে দেয়ার জন্যই তো বঙ্গবন্ধুর ডাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের প্রিয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন