আজঃ শনিবার ● ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২৭শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১৭ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● সকাল ৬:৩৪
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

অপহরণের পর বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ ফতুল্লায় মামুন নামে এক যুবককে অপহরণের পর বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তের এমন বেরিয়ে আসে। পরে সিআইডি মামলাটি তদন্ত শেষ করে নিহত মামুনের খালাতো বোনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়। কিন্তু ৬ বছর পর গতকাল বুধবার দুপুরে মামুন জীবিত এবং সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এদিকে স্কুল ছাত্রী জিসা মনি কাণ্ডের রেশ না কাটতেই মামুন কাণ্ড প্রকাশ পাওয়ায় আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ। সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। জিসা মনিকে নিয়েও পুলিশ একই গল্প সাজিয়েছিল।

ওই ঘটনায় ৩ আসামীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছিল পুলিশ। কিন্তু ৪৯ দিন পর জিসা মনি নিজেই স্বাভাবিকভাবে জীবিত ফিরে আসে। আর মামুন কাণ্ডে পুলিশ একাধিকবার আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেও তাদের কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করতে পারেনি। তবে জামিনে বেরিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন মামুন অপহরণ ও হত্যা মামলার আসামিরা।

ঘটনার সূত্রপাত:
তাসলিমার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব থানা এলাকায়। তার বাবার নাম রহমত উল্লাহ। খালাতো ভাই মামুন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাসলিমা রাজি হয়নি। ক্ষুব্দ হয় মামুন। শুধু কি তাই মামুনের বাবা-মা, ভাই-বোনও ক্ষুব্ধ হয় তাসলিমার ওপর।

তাসলিমা জানান, মামুন আমাকে প্রেমের অফার দেয়। তার অফার রাখি নাই দেখে সে বাড়িতে অনেক গ্যাঞ্জাম করে। বাড়িতে লোক পাঠায়। তারপর গ্রামের মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করা হয়। তারপরও তারা তাদের ছেলেকে সামলায়ে রাখতে পারে নাই। তখন সে রাস্তা-ঘাটে আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করতো। ডিস্টার্ব করার পরও আমি বাড়িতে থাকি।

তাসলিমা আরও জানান, এক পর্যায়ে মামুন ও তার পরিবারের ভয়ে আমি আমার ভাই রফিকের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় আমার খালা আমেনা বেগমের কাছে চলে আসি। কিন্তু তারা আমার পিছু ছাড়েনি। আমাকে ক্ষতি করার জন্য ওঠে-পড়ে লাগে। কয়েকদিন পর আমি আবার গ্রামের বাড়ি চলে যাই। বাড়ি যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের তিনমাস পর আমার নাকের একটা অপারেশন হয়। ডাক্তারের কাছ থেকে আসার সময় মামুনের মা-ভাই-বোন আমাকে রাস্তায় একা পেয়ে অনেক টর্চার করে। এ সময় আমি গর্ভবর্তী ছিলাম। আমাকে টেনে হেঁচড়ে ওদের বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। সেখানেও অনেক টর্চার করে। ওই ঘটনায় আমরা কোন বিচার পাই নাই।

তাসলিমা জানান, মামুন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু মামুনের বাবা আবুল কালাম আমিসহ আমার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং আমার মামা সাত্তারকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। আর এই মামলায় আমি ও আমার ভাই এক বছর করে জেল খাটি। বাকিরা সবাই এক মাস করে জেল খাটে।

জেলে থাকাবস্থায় আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়। আমাকে গর্ভাবস্থায় জেল খাটতে হয়েছে। দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জবানবন্দি দেইনি। কারণ আমরা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এরই মধ্যে মামুন (৩০শে সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির হয়েছে।

৬ বছর পর ফিরে আসা মামুন জানায়, তার বাবা-মা তাকে কাজ-কর্ম করতে বলে। তাই বাবা-মা’র সঙ্গে অভিমান করে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ছোট-খাটো কাজ-কর্ম করেছি। রেস্টুরেন্টেও কাজ করেছি। ৬ বছর পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাসলিমাদের বিরুদ্ধে আমার বাবা মামলা করেছে এবং মামলায় তারা জেলে ছিলো- এটা আমি জানতাম না। মামলা কেনো করেছে, তাও আমি জানি না। গত ২২শে সেপ্টেম্বর বাড়িতে আসি। মায়ের কাছে জানতে পারি মামলার কথা। পরে বাবার মামলার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মাকে সাথে নিয়ে আদালতে আসছি।

আদালত সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ১০ই মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ই মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন মামুনের বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল।

বিবাদীরা হলো তাসলিমা, রহমত, রফিক, সাগর, সাত্তার, সোহেল। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত ৬ জনকেই গ্রেপ্তার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডে থাকা সময়ে গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকে মারধর করা হয় এবং ৬ জনকেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কেউ আদালতে জবানবন্দি দেয়নি।

এদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ই মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে।

পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। এতে তিনি মামলার এজাহারভুক্ত ৬ জনকেই অভিযুক্ত করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১০ই মে খালাতো বোন তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হওয়াতে বিবাদী ৬ জন মিলে মামুনকে কোমল পানির সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায় কিভাবে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন