আজঃ বুধবার ● ২২শে কার্তিক ১৪৩১ ● ৬ই নভেম্বর ২০২৪ ● ৩ জমাদিউল-আউয়াল ১৪৪৬ ● সকাল ৭:২০
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

মানুষ ক্রমে নীতিজ্ঞান  শূন্য হয়ে পড়ছে!   

ফাইল ছবি

সোহেল সানিঃ সমাজে Victimless crime বেড়ে গেছে, আর তা হলো অশ্লীলতা বা Obscenity।
মানুষ নীতিজ্ঞান শূন্য হয়ে বিভিন্ন অশ্লীল কু-কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। পর্নোগ্রাফি কিংবা নীল ছবি উপভোগ ব্যক্তিজীবনকে করছে উচ্ছৃঙ্খল।
এ অশ্লীলতার ফলে ব্যক্তির ধর্ষণের প্রবণতা বাড়ছে। উঠতি কিশোর-তরুণরা তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে না পেরে হত্যার মতো পথও বেছে নিচ্ছে।  চরম অশ্লীলতায় প্রভাবিত হচ্ছে  শিশু-কিশোররা। রাষ্ট্র এ অশ্লীলতার কবল হতে হতে মুক্ত করতে না পারলে এ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।  ইউটিউবসহ সামাজিক কিছু মাধ্যমের অশ্লীল প্রদর্শনের অবাধ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে কোমলমতি কিশোর-কিশোরীর অধঃপতন রোধ করা শুধু বক্তৃতা বিবৃতিতেই সম্ভব হবে। প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণের শুরুতে  মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী যখন এতিম দুই শিশুকে বাড়ি হতে বের করে দিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি হাতিয়ে নেন, এবং গভীর রাতেও যখন এতিম শিশু দুটি বাড়ির গেইটের সামনে মূর্ছা যায়  তখন সাধারণের মনুষ্যত্ববোধের কথা কী আর বলবো।
সব অবক্ষয়ের মুখেও আশার  কথা হচ্ছে স্বপ্রনোদিত হয়ে সেই এতিম শিশু দুটির পাশে দাঁড়িয়েছেন একজন বিচারপতি। গভীর রাতে একক বেঞ্চ থেকে বিচারপতি বাড়িটিতে প্রবেশ এবং শিশুদ্বয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আদেশ দিয়েছেন স্থানীয় থানা প্রশাসনকে। আইনজীবী চাচাকে আদালতে হাজিরপূর্বক কৈফিয়তও তলব করেছেন এবং শিশু দ্বয়ের অধিকার ফিরিয়ে দিতে কতিপয়  পদক্ষেপ নিতেও আদেশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য শিশু দুটি প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কে এস নবীর দৌহিত্র। যিনি আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ব্যারিস্টার কে এস নবী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার পদে আসীন হন।
হাইকোর্টের বিচারপতির এই মানবীয় আদেশদানের ঘটনা
বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাকে জাগ্রত করেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশে হত্যা-ধর্ষণ, সন্ত্রাস-নিপীড়নের দায় সরকার এড়াতে পারে না।’
তাঁর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকারের দায়িত্ববোধের বিষয়টিকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। সত্যিকার অর্থেই দেশের  পরিস্থিতিতে জনমনে ভীতি ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু সাধারণ মানুষকে তার ভীতি ও উৎকন্ঠার   প্রতীকারের জন্য শুধু সরকারের পুলিশ প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকা কোনভাবেই সুনাগরিকের পরিচয়বহন করে না। সামাজিক জীব হিসাবে প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলবো, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে যখন রিফাত শরীফ হত্যার সম্মুখীন হয়, তখন দেখা যায় শতশত মানুষ তা দাঁড়িয়ে থেকে প্রত্যক্ষ করছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়,শতশত মানুষ যেন রূপালী পর্দার দর্শক- নায়ক হত্যা দেখছেন ভিলেন বাহিনীর হাতে! নায়িকার নাটকীয় চেষ্টার মুখে হত্যাকারীরা যেখানে হিমশিম অবস্থা, সেখানে মানুষ কী চাইলে  রিফাতকে বাঁচাতে পারতো না? মানুষ তার উদগ্র আকাঙ্খা চরিতার্থ করার হীন মানসে কুকর্মে লিপ্ত। দাম্পত্য কলহে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর অমানবিক ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। তারপর ধর্ষণের পর হত্যা। সামাজিক জীবন অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। মানুষ আতঙ্কে উৎকন্ঠায় প্রতিবাদের ভাষা ভুলে গেছে। প্রতিদিন হত্যা, ধর্ষণ, চোখ উপড়ে ফেলা, হাতপায়ের রগ কর্তন এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ার মূলে মানুষের নীরব দর্শক হয়ে থাকাও অনেকটা দায়ী।
ন্যায়নীতি, আদর্শ মূল্যবোধ সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়লে সমাজ বাঁচবে কী করে? মধ্যবিত্তের সমাজহিতৈষী অবস্থান ভেঙে পড়েছে।    মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়া শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা।
এমন একদিন ছিল, যখন সামাজিক স্তর বিন্যাসের ক্ষেত্রে বংশ ও শিক্ষাকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হতো। মানবীয় সেই গুণাবলীর যথেষ্ট কদর এখন আর নেই। বংশ ও শিক্ষার চেয়ে অর্থকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। মানুষ বৈধ-অবৈধ সব পথেই অর্থ উপার্জনে মরিয়া।  সমাজে পড়েছে বিশ্বের উন্নত দেশের সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের প্রভাব। অপরাধীরা আগের তুলনায় অনেক বেশী জটিল ও অভিনব পদ্ধতিতে অপরাধ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধ দমনে যথেষ্ট ভুমিকা রাখতে পারছে না। প্রদীপদের মতো কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বর্বরতার কারণে মানুষও পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারে না। তথ্য দিতে গিয়ে যদি উল্টো ফেঁসে যাই। বিচ্যুতি হচ্ছে এমন এক আচর, যা সামাজিক মূল্যবোধকে ভঙ্গ করে।
এর প্রভাবে সমাজ জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। আর মধ্যবিত্তের সমাজের প্রতি উচ্ছ্বসিত সহজাত প্রেম এবং মানবতাবাদী বিবেক আজ মৃতপ্রায় লাশ। তাই তো সে এখন প্রকাশ্য  হত্যা-ধর্ষণের মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী হয়, কিন্তু ঝুঁকি নেয় না।
কর্তব্যনিষ্ঠার যতটুকু, তা হলো আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণপূর্বক লোমহর্ষক বর্বরতার দৃশ্য অবলোকন আর মোবাইল ক্যামেরায়  দৃশ্যধারণের প্রতিযোগিতা! অথচ,
প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষা না হারিয়ে সমাজকে সংঘটিত করা তার কর্তব্য। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত সন্তানরাই পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংঘের নেতৃত্বে থাকতো। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতো উঠতি তরুণরা। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে সেসব ক্লাব-সংঘ এখন মাদকসেবীদের বা  গডফাদারের ক্যাসিনো ঘর। স্বাধীনতা ও বিকাশ, দুটি শব্দ। অধীনতায় বিকাশ যেমন সম্ভব নয়, তেমনি অবিকাশে স্বাধীনতাও সম্ভব নয়। দেশ জুড়ে কেবল শেষ অবেক্ষণের টানাহেঁচড়া, না আছে প্রকৃত স্বাধীনতা, না আছে বিকাশ। দেশকে আলোকিত করার দায়িত্ব যেন শুধুই জাতির জনক কন্যার। যদি তাই হয়, তবে কেন এত রক্ত, এত চোখের জলে কেনা স্বাধীনতা? মধ্যযুগীয় বর্বরতায় ফিরে  কেবল সেই সমাজ যার কোন মানবমুখী মৃত্তিকা-সম্পৃক্ত বাস্তব ভিত্তি নেই। ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি, আইন-আদর্শ ও মূল্যবোধহীনতার কারণে সামাজিক বিচ্যুতি। দর্শকবেশে ভিডিও ভাইরাল করা নয়, প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে। কারণ সমাজ না বাঁচলে পরিবারও বাঁচবে না।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন