আজঃ রবিবার ● ৮ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২১শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১১ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● বিকাল ৪:৫৪
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

বস্তিতে পাউরুটি খেয়ে দিনাতিপাত করা ছেলেটি আজ আমেরিকার গবেষক

জয়কুমার বৈদ্য ও তার মা

নাম জয় কুমার বৈদ্য। স’ময় মুম্বাইয়ের কুরলা বস্তিতে থাকতেন এই জয়কুমার বৈদ্য। বস্তিতে একটা ছোট ঘরে মায়ের স’ঙ্গে থা’কতেন তিনি। মায়ের নাম ছিলো নলিনী। ছেলেটির নানি একটি চাকুরী করতো। কখনও শিঙাড়া, বড়াপাউ খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। কিন্তু তাতে কি আর সম্ভব।এত ক’ষ্ট হলেও হাল ছাড়েননি জয়কুমার। মন শ’ক্ত করে রেখেছিলেন তাঁর মা-ও। স্কুলে মাইনে দিতে না পারায় স্কুল ক’র্তৃপক্ষ একবার নলিনীকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলেকে গাড়ি চা’লানো শিখতে; টাকা না থাকলে পড়াশোনা হয় না।

সেই জয়কুমারই এখন যুক্তরাষ্ট্রে গবে’ষণা করছেন। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা নলিনীকে বের করে দি’য়েছিলেন। ছেলেকে স’ঙ্গে নিয়ে তিনি ঠাঁই নেন ও’ই বস্তিতে। ২০০৩ সাল থেকে তাঁদের অবস্থা আরও খা’রাপ হয়ে যায়।
নলিনীর মা একটা চাকরি করতেন। মে’য়েকে তিনি অর্থ সাহায্যও করতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে অ’সুস্থতার জন্য তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়। দরি’দ্রতার প্রভাব যাতে ছেলের পড়াশোনার ও’পরে না প’ড়ে সে জন্য মা নলিনী অনেক কিছু করেছেন। যখন যে কাজ পেয়েছেন তা করেছেন।
এরপর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেসকো-র স’ঙ্গে যোগাযোগ হয় নলিনীর। তারাই স্কুলে বাকি থাকা মাইনের অনেকটা পরিশোধ করে দেয়। কলেজে প’ড়ার সময় সুদ ছাড়া ঋ’ণও দেয় জয়কুমারকে। কিন্তু কারও সাহায্যে নির্ভরশীল হয়ে থাকা পছন্দ ছিল না তাঁর।স্থানীয় একটা টিভি মেরামতির দোকানে কাজ শুরু করেন জয়কুমার।
মাসে ৪০০০ টাকা মাইনে পেতেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় ছাত্রদের পড়াতে শুরু করেন। জয়কুমার ক’ঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জো’রে কেজে সো’মাইয়া কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রিক্যালে স্নাতক হন।
রোবোটিক্সে তিনটে জাতীয় এবং চারটে রাজ্যস্তরের পুরস্কারও পান তিনি।এটাই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। কলেজে পড়াকালীন প্রথম চাকরির প্রস্তাব আসে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো থেকে। কলেজ পাস করেই তিনি টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফা’ন্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এ কাজ পান। বেতন ছিল ৩০,০০০ টাকা।
দু’মাসের বেতনের টাকা জমিয়েই প্রথম নিজের বাড়ির জন্য একটা এসি ক্রয় করেন জয়কুমার। জিআরই আর টিওইএফএল পরীক্ষার জন্য ফর্মপূরণ করেন। ফর্মের জন্য অনেকটা টাকা খরচ হ’য়ে যায়। সেই ঘাটতি মেটাতে অনলাইন টিউশন শুরু করেন জয়কুমার। তিন বছর টাটা ইনস্টিটিউটের স’ঙ্গে কাজ করার পর জয়কুমার পিএইচডি শুরু করেন।
এক স’ময়ে যাঁদের মাসের শেষে হাতে ১০ টাকা পড়ে থাকত, আজ তাঁরই মাসিক স্টাইপেন্ড ২০০০ ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার কিছু বেশি। স্টাইপেন্ডের টাকা থেকে মাত্র ৫০০ ডলার জয়কুমার নিজের খরচের জন্য রেখে দেন। বাকিটা মাকে পাঠিয়ে দেন। খুব তাড়াতাড়ি মাকেও যুক্তরাষ্ট্রে এনে নিজের কাছে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে জয়কুমারের।
২০১৭ এবং ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানের জা’র্নালে তাঁর দুটি গবে’ষণাপত্র প্রকাশিত হয়।সেই গবে’ষণা ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায় যোগ দেন ২৪ বছর ব’য়সী জয়কুমার।

ফেসবুকে লাইক দিন