By মুক্তি বার্তা
ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি দখলমুক্ত না হলে গণতন্ত্র কতটা নিরাপদ ছিল?
সোহেল সানিঃ ব্যাপক উন্নয়নের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে শেখ হাসিনার প্রতি নাভিশ্বাস ওঠেনি। সরকার টানা তিন মেয়াদের ১২ বছর অতিক্রান্তের পথে। কোনো কোনে মন্ত্রী-এমপির চরম অদক্ষতা ও দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে মানুষ হতাশ হলেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভর করে।
সাধারণ মানুষ গণতন্ত্রের অপেক্ষা উন্নয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারে টিকে আছে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগে শুদ্ধিঅভিযান চালিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে দিলেও প্রাণঘাতী করোনার কারণে সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হত্যা ধর্ষণের মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় ছাত্রলীগের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। নির্মল গুহ ও আফজাল বাবুর নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবক লীগ পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে। যুবলীগও কমিটি ঘোষণার সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।
শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগের মতো সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। পূর্নাঙ্গ কমিটি এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদনের অপেক্ষায়।
ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হচ্ছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি অবমুক্ত করা। কেননা এই দখলমুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নিরাপদ জীবনে ফিরে এসেছে। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র মাঝেমধ্যে আহত হলেও অন্তত হত্যার শিকার হয়নি। শেখ হাসিনার ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য যদি নিরূপণ করা হলে, বলতে হয়, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামাত যখন বাস,দোকানপাটে পেট্রোল বোমা মারায় লিপ্ত তখন শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ণ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন। খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশ যখন দুনীতিতে হ্যাট্রিক করে শেখ হাসিনার নাম তখন বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রীর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামাত যখন কল্পনায় মওলানা সাঈদীকে আকাশে দেখে, তখন শেখ হাসিনা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠায়। খালেদা জিয়ার সরকার যখন বিদ্যুৎ এর খাম্বা তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
বিএনপি জামাত সরকার যখন সারের দাবিতে বিদ্রোহ করা কৃষকের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে সার বিতরণ করে।
বিএনপি জামাত যখন বাংলা ভাই শায়খ আঃ রহমানের আবিষ্কার করে শেখ হাসিনা তখন দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে।
খালেদ জিয়া সন্ত্রাসীদের মদদ দেন, শেখ হাসিনা তখন সাকিব মাশরাফিদের খোঁজেন। খালেদা জিয়া যখন বলেন পদ্মা সেতু সম্ভব নয়, শেখ হাসিনা তখন তা দৃশ্যমান করেন।
বিএনপি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এক হয়, শেখ হাসিনার সরকার তখন একেক করে তাদের ফাঁসি কার্যকর করে।
বিএনপি ঐক্য ফ্রন্ট যখন চিৎকার করে জনগনকে বলে মাগো তোমার একটি ভোটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, শেখ হাসিনা তখন বলেন, মাগো তোমার একটি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে (অবশ্য জনগণ এখন ভোট দিতেও আসে না)।
প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র নয়, সাধারণ মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমূল বদলে যাওয়া দেশের চেহারাটা। কিন্তু সরকারের এতো উন্নয়নের পরেও দল হিসাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়েনি বরং ক্রমে কমেছে।
২০০৯ সালের নির্বাচনে টু-থার্ট মেজরিটি পাওয়া সেই আওয়ামী লীগের এখন কী আছে? নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ভোট দিতে যায় না। সর্বশেষ দুটি নির্বাচনের চিত্র বলে দেয় নির্বাচন নিয়ে জনগণেরও আর মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য, সুশাসনের জন্য এটা আশার কথা নয়। আওয়ামী লীগকেই সবার আগে তা ভাবতে হয়।
শেখ হাসিনার ওপর ভর করে সরকার চলছে। কিন্তু দলে রয়েছে সাংগঠনিক স্থবিরতা, কোন্দল, হানাহানি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি।
এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মুবার্তা/এস/ই