আজঃ বুধবার ● ২২শে কার্তিক ১৪৩১ ● ৬ই নভেম্বর ২০২৪ ● ৩ জমাদিউল-আউয়াল ১৪৪৬ ● সকাল ৭:৩৬
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

সরকারের সকল সংস্থাসমূহ আকবরকে গ্রেফতারে কাজ করছে

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ সরকারের সকল সংস্থাসমূহ আকবরকে গ্রেফতারে কাজ করছে। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের এই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই সিলেট মহানগর পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার নিশারুল আরিফ সিলেটে এসেছেন।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাত ৯টায় ঢাকা থেকে সিলেট ফিরেই সরাসরি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত আখালিয়া এলাকায় রায়হান আহমদের বাসায় গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন সিলেট মহানগর পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার নিশারুল আরিফ।

এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে বিমান যোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন রাত ৮টায়। বিমানবন্দর থেকে তিনি হজরত শাহজালাল রহ. এর মাজার জিয়ারতে যান। মাজার জিয়ারত শেষে তিনি রায়হানের বাসায় গিয়ে তার মা সালমা বেগমকে সমবেদনা জানান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিশারুল আরিফ বলেন, পুলিশের পাশাপাশি আকবরকে গ্রেফতারে সাধারণ জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা তাকে কোথাও দেখে থাকলে পুলিশকে খবর দিন। অথবা আপনারা নিজেরাই তাকে গ্রেফতার করবেন, গ্রেফতার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশের কাছে তুলে দেবেন। সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে।

সিলেটের এই নতুন পুলিশ কমিশনার বলেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে অপরাধী পুলিশ হোক আর যেই হোক অপরাধী, অপরাধীই। অপরাধিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা পুলিশ সদস্য যদি আকবরকে অপরাধ সংঘটন বা পালাতে সহায়তা করে থাকেন তাহলে তারা আমলযোগ্য অপরাধ করেছেন। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ যদি অসির চেয়ে মসি বড় হয়ে যায় তাহলে তো এ রকম হওয়ায়ই স্বাভাবিক। তবে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু বলা যাবে না।

এ সময় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) পরিতোষ ঘোষ, উপ-পুলিশ কমিশনার (পিওএম) কামরুল আমিন, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।

এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরী লাশ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে।

অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রোববার কনস্টেবল টিটুকে ফের তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (সাময়িক বরখাস্তকৃত) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি হতে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এস আই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন