Edit By: মুক্তি বার্তা
প্রবন্ধ- “সমাজ” (কেয়ন ইমরান)
অন্ধকার! চারিদিকে ঘোর অন্ধকার! সমাজটা কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে, একটু আলোর ফুলকি দেখার জন্য। কিন্তু কে নিয়ে আসবে সেই ন্যায়ের খড়গ হাতে, মুখে মিষ্টি মধুর কথামালা, প্রেমময় উক্তি। মলিন বদনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমাজের অসহায় সকল প্রাণী, সমাজ গগণে বিষণ্নের কালো ছায়ায় গ্রাস করে ফেলেছে তাদের মন তথা ভাগ্যাকাশ। সকল আশা-ভরসা ভেঙ্গে খান খান, ফেটে চৌচির যেন মরুর প্রান্তর। চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে থাকা শত অপেক্ষা এক পশলা বৃষ্টির তরে দু’হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার নিকট ভিক্ষা মাগিছে।
ফুলের রেণু হতে মধুপের মধু আহরণ করার ন্যায় একটু শান্তি পাওয়ার আশায় সমাজের মানুষ ছুঁটছে দ্বিগবিদিক। আসলে, সমাজে ঘুণপোকায় বাসা বেঁধেছে। মানবিক বোধ খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে সমাজের দামড়া ঘুণপোকা গুলো। দামী কাগজে বিক্রি হয়ে গেছে দায়িত্ববোধ, মমতাবোধ তোলা আছে নকশি শিকেয়, যা প্রয়োজনীয় এবং নির্দিষ্ট দিনে স্মরণ করা হয়। জাতির অনুভূতি সব মিউজিয়ামে বন্দী। যা পরতে পরতে ভাইরাল নামক শব্দ দ্বারা প্রভাবিত হয় প্রয়োজনে, আবার বিলীন হয়ে মিউজিয়ামে আটকে যায়। পদ্ধতি একটাই- পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন। এক কথায় জংপড়া যন্ত্র মাঝে মাঝে ঝালায় করে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখা মাত্র।
এভাবে চলতে চলতে একদিন এই সমাজ চির নিদ্রায় শায়িত হবে। সেদিন দামড়া দামড়া ঘুণপোকা গুলো বিরাজ করবে সর্বত্র। ঘুণপোকাদের কথায় সমাজের অসহায় প্রাণীগুলোর দিন-রাত নির্ধারণ হবে। এমন কি আহার-নিদ্রা, আচার-ব্যবহার, পোষাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে সংস্কৃতি পর্যন্ত। অর্থ আর ক্ষমতা মানুষকে হিংস্র পশু বানিয়ে দেয়। মানুষ তখন তার আমিত্বকে খুন করে ফেলে, নষ্ট হয়ে যায়, পঁচে যায় তার মানবিক অনুভূতিগুলো। কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকে মানুষের রুপ। পাহাড়ে ঝর্ণা থাকে কিন্তু মানুষের অন্তরে তখন আর মমত্ববোধ থাকে না। চক্ষু হয়ে উঠে আবীর, কণ্ঠ হয় কর্কশ; আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। নিষ্ঠুর হয় কিভাবে এই মানুষ- তা তখন প্রত্যক্ষ করা যায়।
মেকি সমাজের মেকি নিয়ম-কানুন বিষিয়ে তুলেছে অসহায় প্রাণীগুলোর। স্বচ্ছল মানুষ গুলো অস্বচ্ছল মানুষের কোন মানুষই মনে করে না, যেন তারা অতি ক্ষুদ্র কোন অকেজো প্রাণী; যা প্রয়োজন ছাড়া অব্যবহৃত। নষ্টামি দিন দিন চরমে উঠছে। এই জাতির তরে কোন কিছু সৃষ্টি হলে তা আর সহজে বিলীন হয় না। হয় তার চেয়ে বেশি কিছু হবে আর না হলে কম কিছু হবে। তাছাড়া একেবারে বিলীন হবে না। হায়, আফসোস! এ জাতি কোন দিন আপনারে ভালোবাসতে শিখল না, শুধু অর্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসলো সারাটি জীবন। আর তার খেসারত দিয়ে আসছে আজীবন। তবুও এতটুকু শিক্ষা হল না। আপনারে যে গড়তে জানিলো না আপন ছাঁচে, সে আবার খাঁটি মানুষ হবে কি করে?
মানুষ এখন দানুষ। কারণ মানুষের মন্যুষত্ব নেই। আছে দন্যুষত্ব, যা মানবকে দানবে পরিণত করেছে। মায়া-মমতা হারিয়ে গেছে বোশেখ মাসের দৈত্য-দানবের তাণ্ডবলীলায়। মানুষের মাঝে পদার্পণ করেছে দানব। তাই মানুষ পেয়েছে দানবিকতা, যাতে নেই প্রেম-মহব্বত-আদর শুধু আছে স্বার্থ-অর্থ। মানবিকতা বোধ তখনই জাগ্রত হয়, যখন একে অপরের কাছে প্রয়োজন বোধ জাগ্রত হয়। আর্থিক লেনদেনে এখন মানুষ সালাম ঠোকাঠুকি করে, জানাতে চাই এখনও ধর্মীয় আচারণবোধ বিদ্যমান রয়েছে। অথচ ভেতরে ভেতরে মানুষ অনেক ধ্বংস হয়ে গেছে, বিকিয়ে ফেলেছে মন্যুষত্ববোধ। শুধু মুখে মুখেই নীতি বাক্যের ফুলঝুড়ি ঝরছে তো ঝরছেই-পুরোটাই অভিনয়।
মুবার্তা/এস/ই