আজঃ বুধবার ● ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১ ● ৮ই মে ২০২৪ ● ২৮শে শাওয়াল ১৪৪৫ ● সকাল ৮:১১
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

যশোরে নারী আন্দোলন…দ্বিতীয় পর্ব

সাজেদ রহমানঃ যশোরে নারী আন্দোলনে অনেক নারী ভুমিকা রেখেছেন। তাঁদের মধ্যেে একজন হলেন কনক মুখোপাধ্যায়। পিতা সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন আইনজীবী। কনকের লেখাপড়ার প্রতি ছিল প্রচন্ড আগ্রহ এবং ছিল অসাধারণ মেধা। এদিকে তাঁর মা অকালে মারা গেলে কিছুদিন পর গ্রামের বাড়ি বেন্দা থেকে কনকরা পিতার কর্মস্থল যশোর শহরে চলে আসেন।  সেখানে বাবা আবার বিয়ে করেছেন। মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে তাঁদের সকলেরই ছিল আপত্তি ও অনীহা। তা সত্ত্বেও স্কুলে বারবার প্রথম হয়ে ও বৃত্তি পেয়ে জেদী কনক লেখাপড়া চালাতে থাকেন। উঁচু ক্লাসে উঠে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়(১৯৩৮) কর্মে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য এবং সেই সঙ্গে কৃষ্ণবিনোদ রায়, সুকুমার মিত্র, শান্তিময় ঘোষদের প্রভাবে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ম্যাট্রিক পাশের পর কলকতা দিদির বাড়ি থেকে বেথুন কলেজে পড়া শুরু করেন এবং অল ইন্ডিয়া ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় সদস্য হন। সে সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেবল শুরু হয়েছে। তখন কনক একদিন বে-আইনী যুদ্ধ বিরোধী পোষ্টার ও হ্যান্ডবিল সমেত পথের মাঝে ধরা পড়ে যান। বাড়িতে আপত্তিকর পত্রপত্রিকাদি রাখার জন্য তাঁর দিদিও গ্রেফতার হন। বেশ কিছু হেনস্তার পর তাঁরা ছাড়া পান। কিন্তু এই ঘটনার ফলে বাড়ির সঙ্গে কনকের সম্পর্ক এক রকম ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির অফিসে এসে ওঠেন। পার্টির নির্দেশে গার্ল স্টুডেন্টস এসোশিয়েশন গঠন করেন এবং গভীরভাবে ছাত্র আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৪০ সালে পুলিশ তাঁর উপর কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা গুলো থেকে বহিষ্কারের আদেশ জারি করে। তখন কেবল আইএ পাশ করেছেন। পাার্টি তাঁকে বরিশালে প্রখ্যাতা মহিলা নেত্রী মনোরমা বসুর কাছে রেখে বিএম কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করে। বরিশালে থাকাকালে সেখানেও ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন এবং মাস কয়েকের মধ্যেই সেখান থেকেও তাঁর উপর আবার বহিষ্কারের আদেশ নেমে আসে।
তখন তিনি গোপনে খুলনায় এসে চারুলতা ঘোষের বাসায় কয়েকদিন থেকে খানকা গ্রামে ভানুদেবীদের বাড়িতে এসে উঠেন। সেখান থেকে সপ্তাহ চারেক পর পার্টির নির্দেশে কমরেড প্রমথ ভৌমিকের সঙ্গে গোপনে কলকাতায় পৌঁছে চলে যান কমরেড মুজফফর আহমদের কাছে। ১৯৪১-৪২ সালের মাসগুলো আত্নগোপন করে থাকেন।১৯৪২ সালের অক্টোবরে পার্টির সম্মতি নিয়ে স্বনামধ্য কমিউনিষ্ট নেতা সরোজ মুখোপাধ্যয়ের সঙ্গে বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৫০-৫১ সালে নিবর্তনমুলক আইনে, ১৯৬২-৬৩ সালে ভারতরক্ষা আইনে এবং কয়েকবার আইন অমান্যর দায়ে কারাবরণ করেন। দীর্ঘ কর্মময় রাজনৈতিক জীবনে কনক অসংখ্য শিক্ষা, শিক্ষক, লেখক, মহিলা ও রাজনৈতিক সংগঠন ও সমিতিতে যুক্ত হয়ে জনগণের সেবা করেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় রাজ্যসভার মাননীয় সদস্যা। তিনি সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি বহু কবিতা, সাহিত্য, শিক্ষা-সংক্রান্ত গ্রন্থের রচয়িতা। ‘‘ঘরে বাইরে’’ এবং ‘‘এক সাথে’’ নামে দুইটি বহুল পঠিত বামপন্থী মহিলা পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন। তাঁর বইয়ের মধ্যে রয়েছে, ‘‘বন্দী ফাল্গুন’’ নির্বাচিত কবিতাসংগ্রহ’’ উল্লেখযোগ্য। প্রসঙ্গত, কর্মসুত্রে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বাংলাদেশ, পশ্চিম জার্মানি, সোভিয়েত রাশিয়া, পোলান্ড, চিন প্রভৃতি দেশে ভ্রমণ করেছেন। ২০০৫ সালের ৯ মার্চ তিনি মারা যান।
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন