আজঃ রবিবার ● ২২শে বৈশাখ ১৪৩১ ● ৫ই মে ২০২৪ ● ২৫শে শাওয়াল ১৪৪৫ ● সন্ধ্যা ৬:২০
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

যশোরে নারী আন্দোলন- চতুর্থ পর্ব

ফাইল ছবি

সাজেদ রহমানঃ যশোরে নারী আন্দোলনে গীতা মুখার্জীর ভুমিকাও অনেক। ১৯২৪ সালের জানুয়ারিতে জন্ম গীতা মুখার্জীর পিতা খ্যাতনামা আইনজীবী প্রফুল্ল কুমার রায়চৌধুরী(লালু বাবু)। মেধাবী ছাত্রী, ম্যাট্রিকে পান ডিভিশনাল স্কলারশিপ। স্কুলে পড়ার সময়ে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। তিরিশের দশকে যশোরে যে ‘‘নারী মঙ্গল সমিতি’’ গঠিত হয়েছিল ‍এবং বিভিন্ন আ্ন্দোলনে নারীরা অংশ গ্রহন করতেন, গীতা মুখার্জী(রায়চৌধুরী) সেই আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন।
শীঘ্রই বে-আইনী কমিউনিস্ট কর্মী গ্রুপের সদস্যা হন। তারপর কলকাতায় আশুতোষ কলেজে ভর্তির পর ছাত্র ও মহিলা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন। ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসাবে ছাত্র ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত গার্লস স্টুডেন্টস এসোসিয়শনের সম্পাদিকা হন। ১৯৪২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন এবং স্বনামধন্য ছাত্রনেতা বিশ্বনাথ মুখার্জীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও পরবর্তীকালে আন্দমান বন্দী মুক্তি আন্দোলনে, দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের সেবার আন্দোলনে, আজাদহিন্দ ফৌজের মুক্তির জন্য কলকাতার ধর্মতলায় ঐতিহাসিক মিছিলে, ১৯৪৬-এর রসিদ আলি দিবসে, ২৯ জুলাই-এর ডাক-তার সাধারণ ধর্মঘটের সংহতিতে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব দাবি দাওয়ার বহু আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে ক্রমে ক্রমে অবিভক্ত বাংলার বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হন।
১৯৪৯ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য কমিটির ছিলেন সদস্যা। পার্টি বে-আইনী হওয়ার সাথে সাথে তিনি বিনা বিচারে বন্দী হন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আত্নগোপন করেন। তারপর পার্টি আবার আইনী হলে আত্নপ্রকাশ করেন। ১৯৫৩ সালে গ্রামে চলে যান। এক টানা দশ বছর মেদিনীপুর জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক আন্দোলন ও মহিলা আন্দোলনে অংশ নেন। এর মধ্যে আবার এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক মহিলা সংগঠনে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে সদর দফতর বার্লিনে কাজ করেন। সেই সময় এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন।
১৯৬৭ সালে পুর্ব-পাঁশকুড়া কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্যা হন। ওই কেন্দ্র থেকে আবার ১৯৬৯, ৭১ ও ৭২ সালেও নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে হন পরাজিত। ১৯৮০ সালে আবার লোকসভার নির্বাচনে  পাঁশকুড়া কেন্দ্র থেকে সদস্যা হন। ১৯৮৫ সালেও ওই কেন্দ্রে পুনর্বার নির্বাচিত হন। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে কয়েকবার কারাবরণ করেন। তাঁর কর্মজীবনের সর্বক্ষেত্রেই কমিউনিস্ট পার্টির নীতি অনুযায়ী আন্দোলনকারীদের দাবি দাওয়াতে দৃঢ় সমর্থন এবং তার জন্য নিরলস সংগ্রাম করেছেন। এটাই তাঁর জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। শত কাজের মধ্যেও কিন্তু মাতৃভুমি যশোরের প্রতি তাঁর টান সব সময় অটুট ও প্রবল ছিল। ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৪ মার্চ তারিখে গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গীতা মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁর শোকবার্তায় জানিয়েছিলেন – “শ্রীমতী মুখোপাধ্যায়ের জীবন ছিল দৃঢ়সংকল্প এবং উৎসর্গীকৃত। তিনি নারী ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন। তাঁর জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, বিশেষত মহিলাদের জন্যে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন