আজঃ বুধবার ● ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১ ● ৮ই মে ২০২৪ ● ২৮শে শাওয়াল ১৪৪৫ ● সকাল ৮:৪৬
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

দুলালের চপের দোকানের ৪৫ বছর

ফাইল ছবি

সাজাদ রহমানঃ বর্ধমানে গেলে সাধারণত উঠি হোটেল ‘বর্ধমান ইন’-এ। তার ম্যানেজার এবং বয়গুলো পরিচিত। কয়েক বছর আগে গেলাম রমজান মাসে। সন্ধ্যার দিকে হোটেল বয় শংকরকে বললাম, ভাজাপোড়া কোন কিছু পাওয়া যাবে? রমজানে এটা খেতে ভালো লাগে।
আমাদের জীপের চালক গৌয়ুরকে ডেকে বুঝিয়ে বলে দিলেন যেতে হবে শহরের শহরের বিসি রোডের পাশে বড়বাজার। সেখানে গিয়ে বলবেন দুলালের দোকানে যাব। লোকজন চিনিয়ে দেবে। কিন্তু জীপ নিয়ে সেখানে ঢুকতে পারবেন না। জীপ মেইন রাস্তার পাশে পার্কিং করে যেতে হবে। তার কথা মত গেলাম। সবাই দেখলাম, দুলালের দোকান চেনে। দোকানে ভীড়ও অনেক।
মাটির উনুন। তাতে হালকা আঁচ। তেতে উঠছে কালচে কড়াই। দোকান ঘিরে লম্বা লাইন। নির্নিমেষ চেয়ে আছে সেই তেতে ওঠা কড়াইয়ের দিকে। তাতে লালচে চপ, পেঁয়াজি, বেগুনির ভিড়। ছান্তা থেকে ছেঁকে ছেঁকে তোলার অপেক্ষা। তাহলেই সবাই চেঁচিয়ে বলে উঠবেন, “দাদা এদিকে”, “আমাকে দশটা আগে দিয়ে দিন”, “অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি, আমাকে ছেড়ে দিন না” ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের বানিয়ে দেওয়া এই শব্দ ‘চপ’ কীভাবে এসেছে জানেন তো? মাংস টুকরো করে কেটে কেটে ভাজা থেকে। অর্থাৎ চপ করে ভাজা।  বর্ধমান শহরের এক প্রান্তে ছোট্ট একটা দোকান। তেলেভাজার। মূলত চপ, বেগুনি এবং পেঁয়াজি। দোকানের বর্তমান মালিক দিলীপ নাগ। তাঁরা তিন ভাই। বহু বছর আগে এখানেই একটা মিষ্টির দোকান ছিল। দিলীপবাবুর বাবা দুলাল নাগের বড় চাচার অংশ আলাদা করে নেয়। তখন চাচার ছেলেরা করে ওষুধের দোকান।
পরবর্তীকালে দুলাল নাগ ওই মিষ্টির দোকান তুলে দিয়ে তেলেভাজা ও ডালপুরির দোকান করে। সেইসময় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় দুলালের চপের দোকান। আজ এই দোকানের বয়স প্রায় ৪৫ বছর। সকালে চপ (৩ টাকা থেকে ৫ টাকা), বেগুনি (৩ টাকা থেকে ৫ টাকা), পেঁয়াজি (৫ টাকা), ডালপুরির সঙ্গে তরকারি প্রতি পিস ৪ টাকা। এখন বিকেলে ডালপুরি হয় না। এই ছোট্ট দোকানে কর্মচারী দুই/তিন জন। দুলালবাবু নিজে প্রথমদিকে চপ, পেঁয়াজি বানাতেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, আলুর চপের পুর কিন্তু দুলালবাবুরই আবিষ্কার। বয়সজনিত কারণে শরীর ভাঙলেও নিয়ম করে দোকানে আসেন সকালে-দুপুরে। খুব সকালে দোকান খোলা হয় এবং সেই রাত্রে বন্ধ হয়। এরকম তেলেভাজার দোকান খুব কমই আছে, যারা প্রায় পনেরো ঘণ্টা ‘সার্ভিস’ দিয়ে যাচ্ছেন। দুলালবাবুর বড়ো ছেলে দিলীপ নাগ-ই প্রধানত দোকান দেখাশোনা করেন। বারোমাস দোকানের সামনে ভিড় দেখলে একবার তেলেভাজা চেখে দেখার ইচ্ছা আপনার হবেই।
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন