আজঃ বৃহস্পতিবার ● ২৮শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ● ১২ই ডিসেম্বর ২০২৪ ● ৯ই জমাদিউস-সানি ১৪৪৬ ● রাত ১০:৫৫
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর নতুন আতঙ্ক সুতা বাহিনী

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোর নতুন আতঙ্ক সুতা বাহিনী। পিস্তল, চাকু, কিংবা চেতনানাশক ওষুধ নয়, এই ছিনতাই চক্রের প্রধান হাতিয়ার ‘সুতা’। ফ্লাইওভারে তাদের ‘মরণফাঁদে’ জিম্মি মোটরসাইকেল চালকরা।

এই ছিনতাই চক্রের সুতার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। আবার কেউবা বিদায় নিচ্ছেন চিরতরে। কারা এই সুতা বাহিনীর সদস্য তাদের খুঁজে বের করতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতিরঝিল, মগবাজার, খিলগাঁও ও কুড়িল ফ্লাইওভারে স্থানগুলো বেশ নির্জন। এই চক্র নির্জন স্থান দেখে দুই পাশের রেলিংয়ে বেঁধে রাখে নাইলনের সুতা। আর পাশেই ওত পেতে থাকে চক্রের সদস্যরা। চালক মোটরসাইকেলসহ উল্টে পড়ামাত্রই ঘিরে ধরে ছিনতাইকারীরা। এরপর তারা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তির টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। চোখে না পড়ার কারণে এসব সুতার ফাঁদে আটকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

এই চক্রের মরণফাঁদ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এই ফাঁদ বেশি পাতা হচ্ছে হাতিরঝিল, মগবাজার, খিলগাঁও ও কুড়িল ফ্লাইওভারে। এসব ফ্লাইওভারে বেঁধে রাখা নাইলনের মজবুত সুতার টানে হাত ও গলায় জখম হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন অনেকেই।

মোটরসাইকেল চালকরা আরো জানান, এই চক্রের সদস্যদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা না হলে এদের ফাঁদে পড়ে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন।

গত ২৭ আগস্ট রাত ২টা থেকে সোয়া ২টার মধ্যে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে অ্যাপস ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও চালক মো. মিলনকে (৩৬) গলা কেটে হত্যার পর মোটসাইকেল ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এই সুতা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দুটি হাসপাতাল ঘুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানেই ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শাহজাহানপুর থানার এসআই আতিকুর রহমান বলেন, রাত ২টা থেকে সোয়া ২টার দিকে মালিবাগের পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার বরাবর ফ্লাইওভারের তৃতীয় তলায় ঘটনাটি ঘটেছে। ধারণা করছি, যাত্রীবেশে কোনো ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিলনের গলায় আঘাত করে মোটরসাইকেল ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

এদিকে গত ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় কুড়িল ফ্লাইওভারে এমন ফাঁদে পড়েন শেখ রায়হান কবির নামের এক যুবক। তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে সুতায় আটকে তার হাত কেটে যায়। সেখানে না থামায় কোনো বিপদ পড়তে হয়নি তাকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির জোবায়ের। গত ১০ জুলাই মধুবাগ ফ্লাইওভারে সুতার ফাঁদে পড়েন তিনি। তানভির বলেন, হাতিরঝিলের মধুবাগ ফ্লাইওভার থেকে নামার পথে কিছু একটা হাতে আটকে যায়। ব্যথা পেয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে দেখি সুতা আটকে হাত কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম কয়েকজন এসে আমাকে ঘিয়ে ধরলো। চাকু দেখিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গেলো।

মাহমুদ রেজা তফুর। যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সুতার ফাঁদে পড়ে গলার চামড়া কেটে যায় তার। তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে হঠাৎ একটা সুতা গলায় পেঁচিয়ে গেলো। আমি বাইকটাকে কোনো রকমে এক হাত দিয়ে কন্ট্রোল করলাম। আরেক হাত দিয়ে সুতাটা ধরলাম। সুতার টান এত বেশি ছিল যে, আমার হাত আর আঙুল কেটে গেছে। হেলমেটটা গলার ওপর না থাকলে গলার রগটা কেটে যেতে পারতো।

রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোতে সুতার ফাঁদে পুলিশ সদস্যরাও পরেছেন বলে জানা যায়। এক পুলিশ সদস্য জানান, এগুলো যেখানে ঘটে সেখানের ছেলেরা জড়িত থাকে। সুযোগ পেলেই তারা ছিনতাই করে। মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হয়। তখন কিছুদিন বন্ধ থাকে। পরে ফের শুরু হয়।

অপর এক পুলিশ সদস্য জানান, এ ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। এখনো মাঝেমধ্যে ঘটছে। কিন্তু সব সময় আমরা চেষ্টা করছি যাতে কোনো নগরবাসী এমন বিপদের মুখে না পড়ে। এছাড়া নিয়মিত আমাদের টহল পুলিশ ফ্লাইওভারের ওপরে টহল দেয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার কেউ না হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, এ ধরনের অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি বলেন, কী উদ্দেশ্যে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। যারা এ ধরনের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন