আজঃ মঙ্গলবার ● ২৯শে মাঘ ১৪৩১ ● ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ● ১১ই শাবান ১৪৪৬ ● সকাল ১০:১৬
শিরোনাম

BY: মুক্তি বার্তা

সুমন আজ একজন অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স ডিজাইনার।

ফাইল ছবি

নীলফামারী প্রতিনিধি : 

নীলফামারী জেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা গ্রামের সুমন মুখার্জী আজ এক পরিচিত নাম গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সংকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙে আজ এক সফল মানুষ হিসেবে পরিচিত। আজ তিনি মাসে ৫০,০০০ টাকা আয় করেন এবং আমেরিকার একটি এজেন্সিতে কাজ করছেন, যা তার জন্য এক বিশাল অর্জন। একসময় যখন নিজের কম্পিউটার মেরামত করার মতো টাকাও ছিল না, সুমন তখন ভেবেছিলেন যে কিভাবে জীবনকে বদলানো যায়। কিন্তু আজ তার কঠোর পরিশ্রম, মনোযোগ এবং স্বপ্নের জন্য তিনি যে জায়গায় পৌঁছেছেন, সেটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

সুমন মুখার্জী, যিনি তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়, তার শৈশব এবং শিক্ষাজীবন ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। তিনি ছোটবেলায় খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুকুমার মুখার্জী এবং মা সবিতা রানী মুখার্জী ছিলেন সাধারণ মানুষ, যারা তাদের সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করতেন। সুমনের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও, তার পরিবার তাকে শিখিয়েছিল যে কঠোর পরিশ্রম এবং স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা কখনোই বৃথা যায় না।

তিনি ২০১৭ সালে ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। পড়াশোনার ব্যাপারে সুমন খুবই আন্তরিক ছিলেন, কিন্তু তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। তার আগ্রহ এবং সৃজনশীলতা তাকে নতুন কিছু শিখতে এবং নিজের দক্ষতা বাড়াতে অনুপ্রাণিত করেছিল। সুমন জানতেন, একদিন তাকে তার স্বপ্নের পেশায় সফল হতে হবে, কিন্তু সে জন্য প্রথমে এক কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইনে সুমনের যাত্রা শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। সে সময় তিনি এ বিষয়ের কোনও তেমন ধারণা না থাকলেও, নিজেকে ডিজাইনের এক নতুন দুনিয়ায় আবিষ্কার করার জন্য তিনি বিভিন্ন কোর্স শুরু করেন। সেই সময় আর্থিক সংকট, পরিবারে ছোট ভাই-বোনের দুশ্চিন্তা, এবং অন্য নানা বাধা-বিপত্তি থাকলেও তিনি থেমে যাননি। একসময় তাকে হাতে সময় না থাকায়, কম্পিউটার স্ক্রীনে রাতজাগা করতে হতো, কিন্তু তার মনোবল কখনোই কমেনি।

সুমন আজ একজন অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তিনি জানাচ্ছেন, “কখনো মনে হয়নি যে আমি এভাবে সফল হব। তবে আমার একটাই লক্ষ্য ছিল—যা কিছু করব, মন থেকে করব। আমি জানতাম, যদি এই পেশায় টিকে থাকতে পারি, তবে আমি একদিন স্বাবলম্বী হব।” সুমনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে আজ একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বর্তমানে সুমন একাধিক আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের জন্য ডিজাইন কাজ করছেন এবং আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রতিমাসে ৫০,০০০ টাকা আয় করছেন এবং তার কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তার সফলতার এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুমন তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “বিভিন্ন সময়েই নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে, কিন্তু আমি জানতাম যে সঠিক সময় আসবে। আমার পরিবারও আমাকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সাহায্যেই আমি আজকের এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।”

সুমনের সফলতার গল্প শুধুমাত্র তার নিজের জন্য নয়, বরং তার মতো অনেকে যারা জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও এগিয়ে যেতে চায়, তাদের জন্য একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুমনের মতে, “যদি আপনি সত্যিকারের চেষ্টা করেন এবং নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন, তাহলে আপনি কোনো বাধাই পার করতে পারবেন।”

আজকের এই সাফল্যকে সুমন তার পরিবার, বন্ধু এবং সকল সহকর্মীর কাছে উৎসর্গ করেছেন। তার এই গল্প প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম, মনোযোগ, এবং অবিচল মনোভাব মানুষকে একদিন অবশ্যই সফলতায় পৌঁছে দেয়। সুমন মুখার্জী তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও উন্নতি চান এবং আরও তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে চান যাতে তারা নিজেদের পেশাগত জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।

ফেসবুকে লাইক দিন