আজঃ শনিবার ● ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২৭শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১৬ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● ভোর ৫:১৭
শিরোনাম

By মুক্তি বার্তা

গণধর্ষণের শিকার নববধূর স্বামী খুলে বললেন সেই ভয়াল সন্ধ্যার নির্মমতা

ফাইল ছবি

নিউজ ডেস্কঃ ধর্ষণের বিভীষিকাময় ঘটনা যদি ঘটে কারো বাস্তব জীবনে, তবে থমকে যায় সময়-অন্ধকার নেমে আসে জীবন অধ্যায়ের প্রতিটি পাতাজুড়ে। এমন অবস্থাই এখন সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার নববধূ ও তার স্বামীর। বুধবার নির্যাতিতার স্বামী খুলে বললেন সেই ভয়াল সন্ধ্যার নির্মমতা।

নববধূর স্বামী জানান, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার আগে স্ত্রীসহ প্রাইভেটকারযোগে হযরত শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারতে যান তিনি। জিয়ারত শেষে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন মাজার থেকে। এ সময় স্বামীকে স্ত্রী বলেন, আমার একজন ছেলেবন্ধু দেখা করার জন্য কল করেছে। তার সঙ্গে এমসি কলেজের গেটে দেখা করবো। এতে সম্মতি জানান স্বামী। তবে সেই বন্ধুর দেখা করার সময় স্বামী সামনে ছিলেন না বলে তিনি জানান।

নববধূর স্বামী জানান, স্ত্রীর সেই বন্ধুর নাম আইনুল। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে এবং রিমান্ডে নেয়।

মামলার বাদী বলেন, এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে পাকা সড়কের উপর গাড়ি রেখে স্ত্রীকে তিনি বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিয়ে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে সিগারেট কিনেন। পরে গাড়িতে এসে উঠার সময় সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তাকে ডাক দিয়ে বলেন, এই দাঁড়া, তোর সঙ্গে এই মেয়ে কে? এ সময় তিনি বলেন- আমার স্ত্রী। এ সময় এগিয়ে আসে সাইফুর-অর্জুনের সহযোগী তারেকুল ইসলাম তারেক, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি।

তখন তারা নববধূর স্বামীকে চড়-থাপ্পড় মারে। তখন তার স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা স্বামী-স্ত্রীকে ধমক দিয়ে জোর করে গাড়িতে ওঠিয়ে নেয়। এ সময় তারেকুল ইসলাম তারেক ড্রাইভিং সিটে বসে ও স্ত্রীকে সামনের সিটে এবং স্বামীকে পেছনের সিটে ওঠিয়ে সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্কর তার সঙ্গে পিছনের সিটে ওঠে বসে। পরে তরিকুল ইসলাম গাড়ি চালিয়ে এমসি কলেজ হোস্টেলের ফটকের সমুখস্থ ছোট্ট ব্রিজে এসে গাড়ি দাঁড় করায় এবং নববধূর স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

তখন তিনি ২ হাজার টাকা দিয়ে তার কাছে আর টাকা নেই বলে জানান। কিন্তু ধর্ষকরা স্বামী-স্ত্রীকে ছেড়ে না দিয়ে গাড়িটি ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণের ৭ নম্বর ব্লকের ৫ তলা নতুন বিল্ডিং এর দক্ষিণপূর্ব কোণে খালি জায়গায় নিয়ে যায়। অন্যরা তখন মোটরসাইকেলযোগে পেছনে পেছনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

এ সময় তরিকুল, মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর নববধূর কানের দুল এবং সোনার চেইন কেড়ে নেয়। এসময় চিৎকার করলে আসামিরা নববধূর মুখ চেপে ধরে।

পরে স্ত্রীকে গাড়িতে রেখে সাইফুর, তারেক রনি ও অর্জুন স্বামীকে ৭ নম্বর ব্লকের পশ্চিমপাশে নিয়ে যায়। এ সময় নববধূর স্বামীকে কথা বলায় ব্যস্ত রেখে প্রথমে সাইফুর রহমান এবং পরবর্তীতে একে একে তারেকুল ইসলাম, মাহমুবু রহমান রনি ও অর্জুন লস্কর প্রাইভেটকারের ভেতরেই নববধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তখন স্ত্রীর চিৎকার শুনে স্ত্রীকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে গেলে আসামিরা তাকে মারধর করে এবং আটকে রাখে।

নববধূকে ধর্ষকরা নির্যাতন করার সময় ৫ তলা বিল্ডিং-এর দ্বিতীয় তলার বারান্দায় একজন ছেলে আসলে তাকে ধমক দেয় এবং চলে যেতে বলে ধর্ষকরা।

নববধূর স্বামী বলেন, প্রায় আধা ঘণ্টা পর তার স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে গাড়ি থেকে নেমে স্বামীর কাছে আসলে আসামিরা তাদের প্রাইভেটকার আটকে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যেতে বলে এবং ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বললে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে পায়ে হেঁটে কলেজে হোস্টেলের গেটে যান এবং একটি সিএনজি অটোরিকশা ডেকে প্রথমে শিবগঞ্জ পয়েন্টে আসেন এবং পরে পুলিশকে ঘটনা জানাতে টিলাগড় পয়েন্টের দিকে রওয়ানা দেন।

এ সময় নিজের কাছে কোনো টাকা না থাকায় নবধূর স্বামী অটোরিকশা চালকের কাছে একশ টাকা ধার চান। তবে তাদের অবস্থা দেখে অটোরিকশা চালক তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করে। ওই সময় সিএনজি অটোরিকশাতে বসেই তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিসিয়াল ফোন নাম্বারে কল দেন এবং ঘটনার বিবরণ বলেন। এ কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ কমিশনারের নির্দেশক্রমে শাহপরাণ থানার সহকারী কমিশনার ধর্ষিতার স্বামীকে ফোন দেন এবং ঘটনাস্থল ও ঘটনার বিবরণ শুনে পুলিশ প্রেরণ করেন।

এদিকে, নববধূর স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে এমসি কলেজের পেছনের গেটের (গোপাল টিলাস্থ) একটি রেস্টুরেন্ট বসে পুলিশের অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিহিত গুহ চৌধুরী বাবলা। তখন ওই নির্যাতিতা নববধূ কাঁদছেন দেখে তিনি সেখানে দাঁড়ান এবং ঘটনার বিস্তারিত শুনেন। তখন বাবলা নববধূর স্বামীকে নিয়ে ছাত্রাবাসের গেটে যান। এসময় পুলিশও চলে আসে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহপরাণ থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মাইনুল আফসার ওসি আব্দুল কাইয়ুম।

তখন পুলিশ টিম ভেতরে ঢোকার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষা করে। তবে শাহপরাণ থানাপুলিশের এসআই সুহেলকে নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবলা ভেতরে ঢুকেন এবং কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বলেন, অভিযুক্তরা ভেতরেই আছে।

পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে পুলিশ ছাত্রাবাসের ভেতরে ঢুকে এবং বাদী এ সময় ৭ নম্বর ব্লকে তার গাড়িটি পুলিশকে দেখান এবং দ্বিতীয় তলার ছেলেটি ঘটনার সময় বেরিয়ে এসেছিলো তাকে শনাক্ত করেন। ছেলেটি তার নাম হৃদয় পারভেজ বলে জানায়।

তখন হৃদয় পারভেজ জানায়, সে যখন বারান্দায় এসেছিলো তখন তার রুমেমেট ৩ নম্বর আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রণি তাকে চলে যেতে বলে।

এ সময় পারভেজসহ হোস্টেলের অন্য ছাত্ররা মোবাইলে রনি এবং অন্য আসামিদের ছবি দেখায়। এ সময় ৬ জনকে শনাক্ত করা হয় এবং তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। অন্য আরো ২-৩ জন আসামির পরিচয় জানতে পারেননি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাদি গড়ি ও ওদের ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।

পরে রাত ১২টার দিকে পুলিশের সহায়তায় তার স্ত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এজাহার দায়ের করেন।

চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ মামলায় এজাহারনামীয় ছয় আসামিসহ সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও র‌্যাব-৯ এর হাতে গ্রেফতার আটজনের মধ্যে সাতজনকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতার হওয়া ও রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হচ্ছে- সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন, আইনুল ও মাহফুজুর রহমান মাছুম।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন