আজঃ বৃহস্পতিবার ● ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২৫শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১৫ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● বিকাল ৪:৩৩
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

চাখারে ৩ সন্তানের জননীকে ধর্ষণ : চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মীমাংসার কথা বলে ১০ দিন আটকে রাখার অভিযোগ

ফাইল ছবি

বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥ বরিশালের বানারীপাড়ার চাখার ইউনিয়নের দড়িকর গ্রামে তিন সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ঘটনার বিচারের নামে ওই নারীকে ডেকে নিয়ে টানা দশ দিন আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান খিজির সরদারের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষিতা নারী বাদী হয়ে  মামলা দায়ের করেছেন। দায়েরকৃত ওই মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক মো. আবু শামীম আজাদ বরিশাল জেলা গোয়েন্দা শাখাকে তদন্ত করে আগামী ৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- একই এলাকার বাসিন্দা এবং গৃহবধূর প্রতিবেশী মৃত আক্কেল আলী হাওলাদারের ছেলে আন্টু হাওলাদার, মৃত লিয়াজ উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে সেলিম হাওলাদার ও মৃত ইসমাইল সরদারের ছেলে সেলিম সরদার। এজাহার সূত্রে জানাগেছে, ‘২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর বানারীপাড়া উপজেলার উত্তর চাখার ইউনিয়নের দড়িকরগ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী নিজ ঘরে রান্না করছিলেন। এসময় অভিযুক্ত আন্টু হাওলাদার সিলিং ফ্যান নেয়ার কথা বলে তিন সন্তানের জননীর ঘরে প্রবেশ করেন।
এক পর্যায় ঘরে একা পেয়ে গামছা দিয়ে গৃহবধূর মুখ বেধে ধর্ষণ করেন। হঠাৎ করে গৃহবধূর স্বামী ঘরে উপস্থিত হলে ধর্ষক আন্টু হাওলাদারের সাথে তার হাতাহাতি হয়। এক পর্যায় ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে অপর আসামি সেলিম হাওলাদার ও সেলিম সরদার ধর্ষক আন্টু হাওলাদারকে নিয়ে পালিয়ে যান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতা ও তার স্বামী থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিলে  বানারীপাড়াা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও

চাখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খিজির সরদার ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের কথা বলে তাদের ডেকে নেন। পরে বিচার না করে ওই চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী নারীকে দড়িকর গ্রামের একটি বাড়িতে আটকে রাখেন।
এমনকি বন্দি থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা গৃহবধূর কাছ থেকে জোরপূর্বক তিনশত টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর টানা দশ দিন বন্দি থাকার পর  গত ৭ জানুয়ারি গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে এসে মামলা করার জন্য স্থানীয় থানায় যান। কিন্তু আলামত নষ্ট হয়ে গেছে বলে মামলা হবে না জানিয়ে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে থানার গেট থেকেই পাঠিয়ে দেন কোন এক কনস্টেবল। পরে ১১ জানুয়ারী সোমবার বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
ধর্ষিতা নারীর স্বামী বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘আন্টু হাওলাদার ঘটনার পূর্বে বেশ কয়েক বার তার স্ত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়েছিল। এতে রাজি না হওয়ায় সহযোগীদের নিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে আন্টু হাওলাদার।
অভিযোগ অস্বীকার করে চাখারের ইউপি চেয়ারম্যান খিজির সরদার বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে বাবুল তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো বলেও আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে পরবর্তীতে সেই আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য বাবুল মীমাংসা নয়, বরং মামলা করার কথা বলেন। এ কারণে আমিও তাকে আইনের সহায়তা নেয়ার জন্য বলেছি।
গৃহবধূকে আটকে রাখার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওই নারী আমার আত্মীয় হয়। আমার কাছে আসার পরে বিষয়টি সমাধানের কথা বলে গৃহবধূকে তার স্বামী-শ্বশুর, দেবর এবং ভাসুরের জিম্মায় দিয়েছি। ওই দশদিন সে তার স্বামীর কাছেই ছিল।
ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসায় কোন সালিশ-মিমাংসার বিধান আছে কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলেও তার সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারেননি তিনি। তবে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি কোন শত্রুতাবশত হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অবশ্য ইতিপূর্বে অভিযুক্ত আন্টু’র কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ধারবাবদ নিয়েছিল বাবুল। পরে সেই টাকা পরিশোধের জন্য বাবুলের বড় ভাই আমার কাছে দিয়েছিল। সেই টাকা আমার কাছেই গচ্ছিত আছে।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেওনি। থানায় প্রবেশ পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টিও অযৌক্তিক দাবি করে ওসি বলেন, ‘নারী নির্যাতনের ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মুহূর্তে থানায় এসে কোন ভিকটিমকে ফেরত পাঠানো হবে সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া থানার সকল অফিসার এবং ফোর্সদের এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে বলে জানান তিনি।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন