আজঃ শুক্রবার ● ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ ● ২৯শে মার্চ ২০২৪ ● ১৭ই রমযান ১৪৪৫ ● রাত ২:১৮
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

স্বামীরূপে মামুনুল হকের স্ত্রীকে বলা সীমিত মিথ্যাই বরং ইসলামের চরম মিথ্যাচার!    

ফাইল ছবি

সোহেল সানিঃ স্বামী সীমিত মিথ্যাচার সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে করতে পারেন, যেমন হে মোর স্ত্রী তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। স্ত্রী বললো, তুমি বাড়িয়ে বলছো, আমার নাসিকা বোচা, গর্তেবসা চোখ, উঁচুস্থ দাঁত, তাহলে সুন্দরী হলাম কি করে?

স্বামী এবার স্ত্রীকে বলিলেন, হে প্রিয়তমা সত্যিই তুমি শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, যেন আকাশের ধ্রুব তারা।
স্বামী নিশ্চয়ই জানেন তাঁর স্ত্রী “তারা” নন, কিন্তু তাঁর এ মিথ্যাচার নিতান্তই স্ত্রীর প্রতি অতিশয় কামনাবাসনা প্রীতিসুলভ একটা আবেগ কথন। খাবার খেতে গিয়ে স্বামী বললো, হে স্ত্রী সত্যিই তুমি শ্রেষ্ঠ রাধুনি। অথচ, ওই খাবার ঘরের অন্য সদস্যদের কাছে মোটেও সুস্বাদু ছিল না। তাহলে স্বামীর এই মিথ্যাচার নেহায়েতই স্ত্রীর প্রতি আবেগপ্রবণতার প্রকাশ। স্বামী এবার বললেন, হে স্ত্রী তুমি আমার চৌদ্দ পুরুষের সর্বাপেক্ষা গুণবতী মহীয়সী নারী। স্ত্রী হাস্যরসের এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে প্রিয়তম স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে স্বামী তুমি সত্যি বলছো নাকি মিথ্যা বলছো আল্লাহ জানেন, আমি শুধু এতটুকু বুঝছি আজ এই বৃষ্টিমুখর রাতে এতো প্রশংসাটার মানেটা কি, স্বামী এবার স্ত্রীকে বললো……
বিতর্কিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের স্ত্রীর প্রতি মিথ্যাচারের ব্যাখ্যাটি নিশ্চয়ই এরকম নয়। অর্থাৎ “কুরআন ও ইসলাম স্বামীকে সীমিতভাবে মিথ্যা বলতে পারেন” মামুনুল হকের এহেন বক্তব্য তার স্বীয় কর্মকান্ডের অনুকূলে সমর্থন যোগ্য হয় কি করে?
মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ‘নিকাহনামা’ ছাড়াই। ভারত সম্রাট শাহজাহান যুবরাজ সেলিমকে হত্যা করে তাঁর ভুবনসুন্দরী স্ত্রী মমতাজকে জোরজবরি করে বিবাহ করেছিলেন। সেই বিবাহ গোপন করে নয়, বরং প্রাসাদ সরগরম করে গোটা ভারতবর্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সম্রাট শাহজাহান মমতাজের ভালোবাসার প্রতি অনুরক্ত হয়ে “প্রেমের স্মৃতিসৌধ তাজমহল” গড়ে তুলেন। যা স্থাপত্যের দুনিয়ায় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য।
সেরকম প্রেমের নিদর্শন কি হেফাজত নেতা মামুনুল হক রাখতে পেরেছেন? না, তিনি নিজের দ্বিতীয় বিবাহটাকেই  গোপন করেছেন, নিকাহনামাবিহীন বিবাহটি জ্যেষ্ঠ স্ত্রীর সম্মতি পূর্বক করেননি। তার দ্বিতীয় স্ত্রী   আরেকজন মওলানা কাশেমের স্ত্রী ছিলেন। সেই দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার পুত্র ভিডিও লাইফে এসে এবং গণমাধ্যমে যে অভিযোগ করেছেন, তা আরও গুরুতর। মায়ের লেখা ডায়েরির পাতায় পাতায় মামুনুল হকের সঙ্গে সম্পর্কের যে ইতিকথা লিখেছেন, তা অত্যন্ত লোমহর্ষক। মামুনুল হকের প্রতিকূলে যা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে নারী-শিশু নির্যাতন অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারযোগ্য অপরাধ। নিকাহনামা বহির্ভূত বিবাহও বাংলাদেশের আইন বিরোধী। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অমান্যকারীকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সর্বশেষ হেফাজত নেতা মামুনুল হকের তৃতীয় বিয়ে নিয়েও জাতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। একটি মাদ্রাসার নারী অধ্যক্ষকে কিভাবে বিবাহ করেছেন, তার সুনিপুণ বর্ণনা বেরিয়ে এসেছে তৃতীয় স্ত্রীর আপন ভ্রাতা কর্তৃক। ভগ্নির নিখোঁজ হওয়ার খবরের অনুকূলে ঢাকার একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই ভ্রাতা। একটার পর একটা চাঞ্চল্যকর ও রোমাঞ্চকর ঘটনা প্রকাশ অব্যাহত থাকলেও বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামুনুল হকের পক্ষে সাফাই গাইছেন একশ্রেণির মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। জাতীয় গণমাধ্যমের খবরাখবরকে বানোয়াট ও মিথ্যা সাব্যস্ত করে এই মহলটি প্রকারন্তরে সরকার বিরোধী একটা ইসলামিক অভ্যুত্থানের দিবাস্বপ্নে বিভোর রয়েছে। স্বাধীনতার পতাকা কপালে ও বুকে এঁটে দিয়ে এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী স্বাধীনতা প্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ১৯৭১ সালে এরা এবং পূর্বসূরিরা চাঁদতারা খচিত পাকিস্তানী পতাকা ব্যবহারের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের লালসবুজের পতাকাকে পূঁজি করে গণমানুষের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ওরা ক্ষমতাসীন দলেও অনুপ্রবেশ করেছে- যা বিভিন্ন ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ রূপে শায়েস্তা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে সাংবাদিকদের ওপর ও তাদের বহনকারী যানবাহনের ওপর জঘন্যরকম হামলা করে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ তুরস্ককেও এরকম মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কবলে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেদেশের জাতির পিতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক জিরো টলারেন্স নীতিগ্রহণ করে কঠোর হস্তে দমন শুধু মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মূলোৎপাটন করেছিলেন। কামাল আতাতুর্ক বেঁচে নেই কিন্তু আছে বিশ্বের দেশে দেশে তাঁর ভাস্কর্য। বাংলাদেশ ভারতে কেবল নয়, এসব মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠির আদর্শ রাষ্ট্র পাকিস্তানেও রয়েছে তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রে স্থাপিত হয়েছে, সেইসব রাষ্ট্রের ভাস্কর্য উচ্ছেদের বিষয়ে হেফাজতের তথা মৌলবাদী ধর্মান্ধগোষ্ঠির কই একটি বিবৃতি বক্তৃতাও তো শোনা যাচ্ছে না। এর নেপথ্যে কারণ একটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে রুখে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ভূলন্ঠিত করে বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করা। দ্বৈত নীতি নয়, কামাল আতাতুর্কের ন্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের মূলোৎপাটন করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে কেবল বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে উন্নত রাষ্ট্রে। তিনি বাঁচলেই কেবল এই মূহুর্তের বাংলাদেশ বাঁচবে, নইলে জাতির সম্মুখে শুধুই অন্ধকার।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস বিশ্লেষক।
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন