আজঃ শুক্রবার ● ২৯শে চৈত্র ১৪৩০ ● ১২ই এপ্রিল ২০২৪ ● ২রা শাওয়াল ১৪৪৫ ● রাত ১১:৪৭
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

নান্দাইলে স্বামী সহ তিন সন্তানের নির্মম হত্যার পর দূর অবস্হায় বানেছার পরিবার

ফাইল ছবি

ফরিদ মিয়া, নান্দাইল ময়মনসিংহঃ প্রবাদ আছে, “মানুষ মরণশীল”মানুষ তার মায়ের গর্ভের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসবে, আর একটা সম সৃষ্টিকর্তার ডাকে পরপারে চলে যাবে এটাই বিধান।কেউ হয়তো দীর্ঘদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে আবার কেউ সংক্ষিপ্ত জীবন শেষে পৃথিবী ছেড়ে যাবে প্রাকৃতিক নিয়মে।
আর সে যে বয়সেই মারা যাক,  প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু হবে এটাই সুস্থ বিবেকবান মানুষের কাম্য।এই প্রকৃতি সমাজ প্রত্য সাী যে কিছু  মানুষের মৃত্যু হয় খুবই অস্বাভাবিক। যা সুস্থধারার  মানুষের বিবেকে নাড়িয়ে দেয় প্রতিবাদী করে তোলে।
এমনেই একটি নির্মম নারকীয় হত্যা কান্ডের ঘটনা ২০১৫ সালের ৪ জুলাই ঘটে গিয়েছিল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বাঁশ হাটি গ্রামে ।
সে ঘটনায় নিজ বাড়িতেই স্বামীর  ভাই ভাতিজারা জবাই করে হত্যা করেছিল বানেছা খাতুনের স্বামী বেলাল হোসেন  (৫০) এবং তার তিন ছেলে ফরিদ (২৫), হিমেল (১৪) ও পাভেল (১০)। তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল পরে স্থানীয় মানুষ  ও পুলিশের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। বানেছা খাতুনের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে বাড়িতে থাকা ছেলে  কিরন মিয়া (৩০) নির্মম হত্যা সহ্য করতে না পেরে সপ্তাহে খানেকের মধ্যে হঠাৎ একদিন ঘরের মধ্যে  রাতে চিৎকার মেরে স্টোক করে মারা যায়।
কি হয়েছিল সেদিন!! বানেছা খাতুন জানান আমার এক চাচাত  বাসুরের নাম  আলী আকবর তার মৎস্য খামারে চাকরি করতো আমার আপন ভাসুর লালামিয়া। সে ফিশারিতে বর্শি দিয়ে মাছ ধরেছিল লাল মিয়ার বোন খুকিলার  নাতি। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে লালমিয়া ও তার ছেলেদের সাথে কাটাকাটি হয়।একপর্যায়ে দেশীয় লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি। পরে দুই পই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
 এই নিয়ে  লালমিয়া ও তার ছেলেরা বেলাল ও তার ছেলেদের দোষারোপ করছে কেন তাদের প নিয়ে  বেলালের বোন খোকিলার সাথে ঝগড়া মারামারি করলো না। তদের শান্তিতে ঘুমাতে দিবনা বলে হুমকি দেয়।
সে দিনেই রাত আটটার দিকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে লাল মিয়া তার অন্য ভাই ও নিকটতম নিজবংশীয় লোকদের নিয়ে হামলা করে সহোদর ভাই  বেলালের পরিবারের উপর। ঘটনাস্থলেই হত্যা করে চারজনকে।গুরুতর আহত করে বানেছা খাতুনকে।  দুই ছেলে রুবেল,হিরণ মেয়ে মুক্তা পালিয়ে বাঁচে। ঘটনার সপ্তাহ খানেকপর স্টোক করে মারা যায় হিরণ। এ ঘটনায়  পরদিন সকালে ওই গ্রামের খালপাড়ে লাল মিয়ার ছেলে জামাল হোসেনের (২২)  লাশ পাওয়া যায়।সেও হত্যা কান্ডের সাথে যুক্ত ছিল বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ছয়বছর পর কেমন আছে পরিবারটি..
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।  অনাহারে অর্ধাহারে অর্থাভাবে কোন মত দিন কাটছে তাদের।আবেগাপ্লুত হয়ে   কান্নাজড়িত কন্ঠে  বানেছা খাতুন জানান,আমাদের খোজঁ  নেওয়ার মতো এই দুনিয়ায়  কেউ নেই। ঘটনার পর থেকে মানসিক রোগে ভোগছে একমাত্র বেঁচে থাকা ছেলে রুবেল (৩৫)।  কোন কাজকর্ম  করে না সারাদিন শুধুই এদিক সেদিক  ঘুরা ঘুরি করে। মাঝে মধ্যেই উল্টাপাল্টা বলে। বিয়ে করিয়ে ছিলাম দুটি বাচ্চা হয়েছে এখন তার এই অবস্থার কারণে বাচ্চাদের নিয়ে বউ বাবার বাড়িতে চলে গেছে।  টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। গিয়েছিলাম প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করাতে। সনাক্ত কারী ডাঃ আকাইদ মানসিক রোগের চিকিৎসাপত্র দেখতে চেয়েছে। কিন্তু কোথায় কার কাছে নিয়ে যাব সে রাস্তারও যেমন জানা নেই তেমনি টাকা পয়সাও নেই। এভাবেই পড়ে রয়েছি।
বেঁচে থাকা একমাত্র মেয়ে মুক্তা আক্তার নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আর্দশ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে বিন্দু মাত্র সুযোগ সুবিধা কলেজ থেকে পাইনা। কত কষ্ট করে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করি। মেয়েটি কলেজে উপবৃত্তির জন্য আবেদন করেছিল কারো দ্বারা সুপারিশ করতে না পারায় সেটিও বাতিল হয়ে গেছে। সরকার কতজনকে কত কিছু দিচ্ছে আজ পর্যন্ত আমাদের ভাগ্য কিছুই ঝুটেনি।
দুটি নাতনীর জন্য যত্ন প্রকল্পের ভাতা পেতে কাগজপত্র দিয়েছিলাম স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনের কাছে সেটিও ভাগ্য জুটেনি। মাত্র বিশ শতক জমি আছে পানির অভাবে সেটিতেও বোরো চাষ করতে পারিনি। অথচ আশপাশের সবাই ফসল করেছে।
বানেছা বলেন নিজের কেউ নেই মানে এই দুনিয়ায় আপন  কেউ নেই। নিজেকে আর সামলাতে পারি না।ছয়টি বছর ধরে বিচারের অপোয় রয়েছি।  এখন শুধু নিজ স্বামী সন্তানদের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চাই।তিনি আরও বলেন বারো জন আসামী ছিল ৫জন নাম কেটে চলে এসেছে আমি জানিও না। বাকীরা বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে জামিনে এসেছে। বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে  মিমাংসা হওয়ার জন্য। আমি মিমাংসা হব না আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।  এটাই শেষ চাওয়া এটাই স্বপ্ন আর কোন স্বপ্ন নেই, আর স্বপ্ন তো সে দিনেই পুড়ে চাই হয়ে গেছে।
উপবৃত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্য বাদল চন্দ্র দত্ত জানান,সময় থাকতে  আমার সাথে যোগাযোগ করলে হয়তো একটা ব্যবস্থা হতো। এখন তো সময় চলে গেছে। বর্তমান অবস্থা তো বুঝেন সুপারিশ ছাড়া কিছু হয় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সহসিন বলেন,বেনেছা খাতুন বিধবা ভাতা পাচ্ছে। আর যত্ন প্রকল্পের জন্য তারা সঠিক কাগজপত্র দিতে না পারায় সেটা হয়নি।
এবিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, এটা অনেক আগের ঘটনা তখনকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ তদন্ত করে লালমিয়া, কামাল, হিরন, সুরুজআলী, হারুন, আবুল, কাজল  এই সাতজনের নামে কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। মামলাটি ময়মনসিংহ জজ কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নান্দাইল উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হক বাবুল উক্ত পরিবারটির জন্য যথাযথ সরকারি সাহায্য অনুদান সহ দ্রুত মামলার কার্যক্রম শেষ করার দাবী জানিয়েছেন।
মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন