আজঃ বৃহস্পতিবার ● ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ ● ২৮শে মার্চ ২০২৪ ● ১৭ই রমযান ১৪৪৫ ● রাত ১০:২৩
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

করোনাযোদ্ধা হিসাবে সম্মাননা-২০২১ পেলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান চৌগাছার এ্যাম্বুলেন্স চালক আলম

ফাইল ছবি

চৌগাছা প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় সম্মুখ শ্রেণির করোনা যোদ্ধাদের মধ্যে সম্মাননা স্মারক পেলেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ আলমগীর হোসেন (আলম)। ২০২০ সালের  করোনাকালের প্রথমদিন থেকেই যার অবদান চৌগাছার পথে প্রান্তরে। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সার্বক্ষণিক দ্বায়িত্ব পালনের জন্য যাকে সবাই একটু বেশি জানে, চেনে ও ভালোবাসে। সেই আলম সাহেবকে চৌগাছাসহ দেশবাসীর কাছে আরও সম্মান বাড়িয়েছে যশোর সিভিল সার্জন কর্তৃক করোনাযোদ্ধা হিসাবে সম্মাননা পেয়ে। সাথে সাথে আরও সম্মাননা স্বারক প্রদান করেছেন মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
আলম সাহেবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি এখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে নিয়মানুযায়ী চিকিৎসারত অবস্থায় আছি। এমতাবস্থায় খুলনা বিভাগে দুই জন ব্যক্তিকে করোনাকালীন দ্বায়িত্ব পালনের জন্য সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়। তার মধ্যে আমি একজন। আমার পক্ষ থেকে যশোর সভিল সার্জন অফিস থেকে সম্মাননাটি গ্রহণ করেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার। তিনি আরও বলেন, আমি সম্মাননা পেয়ে এতো আনন্দিত সে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি সুস্থ হলে আবারও কাজ করে যেতে চায়।

বিগত তথ্য থেকে জানা যায়,চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়২০২০ এর ৩ এপ্রিল থেকে। ২০২০ সালের প্রথমদিন থেকেই এই করোনা ভাইরাসের নমুনা নিচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ আলম। হাসপাতালের পাশেই নিজের বাড়ি হলেও পরিবারের সাথে না থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যম্বুলেন্স রাখার দোতলার একটি রুমে থাকছিলেন তিনি। এমনকি ঘোষণা দিয়েছিলেন এই করোনাকালে যেকোন হাসপাতালে তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি পালন করবেন।
বেশির ভাগ মানুষ যখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত, কেউ আক্রান্ত হলেই দূরে সরে যাচ্ছেন, তখন সেসব মানুষের একেবারে কাছে গিয়ে সেবা দিচ্ছেন আলম। নমুনা নিয়ে প্রথম দিনে ঢাকায় যাওয়া। আবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের জন্য ঢাকা থেকে কীট এনে দেয়া, হসপিটালের সন্দেহভাজনদের ও সনাক্ত রোগীদের বাড়িতে গিয়ে রোগীর পরিবারের নমুনা নিতে সাহায্য করা, হসপিটাল থেকে নমুনা নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসে যাওয়া, সেখান থেকে বিভিন্ন রিপোট নিয়ে আসা সবই করে আসছেন তিনি। শুধু যশোর নয় সারা বাংলাদেশে আমার এই নিয়ে কাজ দিলে আমি না বলিনি কখনো। আমি যদি ঢাকা থেকে আসি এবং তখনো আমাকে বলা হয় এই মুহুর্তে তুমি ঢাকা যাও, আমি কখনো পারবো না বলিনি। তখনি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আবার গিয়েছি।

২০২০ সালের প্রথম ধাপে প্রথম যেদিন শুনলেন নমুনা সংগ্রহের কাজ করতে হবে, কী মনে হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে আলম সেদিন বলেছিলেন ছোট বেলা থেকেই আমি একটু সাহসী। তাছাড়া মার সাথে কথা বললাম, তিনি বললেন, যাও। দেখবে আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার কোন সমস্যা হবে না। নিজের মনের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস আছে আমি যেহেতু কোন অন্যায় করিনি। মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। তখন আমার কিছু হবে না। পরিবারের বাধা আসছে কিনা প্রশ্নে ২ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক মোঃ আলম বলেন, পরিবারের বাধা তো আছেই। আমার বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে। ইচ্ছা আছে তাকে ডাক্তারি পড়াবো। ছোট মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলেটি ছোট। ওদের আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে বাধা তো আসছেই। কিন্তু ওদেরকে বুঝিয়েছি। তাছাড়া সবকথা তো আর পরিবারকে বলা যায় না।
তিনি বলেন, আমার পিতা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি মার্চের ৫ তারিখে ইন্তেকাল করেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে আমি তো বসে থাকতে পারিনা। তাছাড়া পেশায় এ্যাম্বুলেন্স চালক হওয়ায় এটা তো আমার পেশাগত দায়িত্বও।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের করোনাকালের প্রথমদিন চৌগাছার এক নারীকে করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। সেটি আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকে দায়িত্ব দেয়া হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে করোনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে কীট এনে দেয়ার। ১৬ এপ্রিল ২০২০ বৃহস্পতিবার কীট এনে দেয়ার পর ১৭ এপ্রিল শুক্রবার থেকে যবিপ্রবিতে এ অঞ্চলের ৭ জেলার করোনা পরীক্ষা শুরু হয়।
এরপর থামার আর অবকাশ মেলেনি আলমের। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। বললেন, রাতে ঘুম হতে চায় না। করোনার বিভীষিকা, রোগীদের আতঙ্ক, অস্থিরতা আর সব সময় মৃত্যু ভয়ে কাতর মানুষের মুখগুলো চোখের সামনে ভাসে। ভীষণ কষ্ট লাগে, মনটা বিষন্ন হয়ে ওঠে এসব মানুষের দেখে। এখানেই থেমে নেই আলম। নিজ অর্থ দিয়েও করোনাকালে মানুষকে সহায়তা করে চলেছেন তিনি। তিনি বলেন আমার কোনো চাওয়া নেই, এশবাসীর নিকট শুধু ভালোবাসা ও দোয়ায় কাম্য। আমার সন্তানদেরকে সঠিক ভাবে মানুষের মতো মানুষহিসাবে দেখতে চাই। বড় মেয়ে এইচ এস সি পরীক্ষার্থী সে ডাক্তার হতে চাই, মেজো মেয়ে ম্যাজিজট্রেট হতে চাই, ছোট ছেলে এসপি হতে চাই। আমি শুধু সকলের কাছে দোয়া চায়, ছেলেমেয়েরা যেনো তাদের লক্ষ্যে পৌছায়ে দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন,আলম ভালো ছেলে। তাকে কখোনো দ্বায়িত্বে অবহেলা পায়নি। তাইতো এই দূর্দিনে
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিক অধিক দ্বায়িত্ব পালনের জন্য করোনাযোদ্ধা সম্মাননা-২০২১ এর প্রাপ্তি। তার এই প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। আমি তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ তাকে সুস্থ্যতা দান করুক।

মুবার্তা/এস/ই

ফেসবুকে লাইক দিন