আজঃ শনিবার ● ৭ই বৈশাখ ১৪৩১ ● ২০শে এপ্রিল ২০২৪ ● ১০ই শাওয়াল ১৪৪৫ ● বিকাল ৪:৪০
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

চৌগাছায় রেকটিফাইড স্পিরিট খেয়ে নিহত ১ আহত ৩ জন।

ফাইল ছবি

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছায় রেকটিফাইড স্পিরিট খেয়ে জাহাঙ্গীর (৩২) নামে এক জনের মৃত্য হয়েছে। একজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং আরো ২ জন চিকিৎসা শেষে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।

নিহত জাহাঙ্গীর উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পূড়াপাড়া গ্রামের মাহাতাব মন্ডলের ছেলে। অসুস্থরা হলেন একই গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে হাসান ওরফে সাহেব (৩৫), মৃত আলী মিয়ার ছেলে মশিয়ার (৪০) এবং মৃত মোস্তফার ছেলে আবু বক্কর (২৫)। হাসান ওরফে সাহেব বর্তমানে খুলনা গাজি মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। আবু বক্কর (২৫) যশোর ২৫০ ময্যা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছেন এবং মশিয়ার চৌগাছা থেকে চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।

স্থানীয় মেম্বর জানিয়েছেন, গত রবিবার রাত ৮টার দিকে পূড়াপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে নূরে আলম বকুল ও খোকনের কাছ থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট কিনে আনে ভুক্তভোগীরা। এবং নওশেদের বালির গাদার পরিত্যাক্ত ঘরের ছাদে বসে পান করে।

পল্লী চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন,গত রবিবার জাহাঙ্গীরকে চিকিৎসা দিতে আমাকে ডাকে। আমি দেখলাম তার পেশার খুব কম। তার স্ত্রী আমাকে বললো চাচা খুব বমি করছে আর খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না। তখন আমি বললাম এর চিকিৎসা আমার দিয়ে হবেনা। আপনারা চৌগাছায় নিয়ে যান।

জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগির হোসেন জানিয়েছেন, রবিবার রাত থেকেই জাহাঙ্গীরের শারিরিক অবস্থার অবনতি হয়। সে “বুক জ্বলে গেলো” বলে চিৎকার করতে থাকে। এবং স্পিরিট খেয়েছে বলেও জানায়। গত মঙ্গলবার সকালে তার অবস্থা বেশি খারাপ হলে প্রথমে চৌগাছা পরে যশোর এবং সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্য সনদ অনুযায়ি জাহাঙ্গীরকে ২০ জুলাই দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টার সময় তার মৃত্যু হয়। ম্যাথানল বিষক্রিয়া ও শকের (আঘাত) কারনে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই মিথানল বিষক্রিয়া কি জানতে চাইলে যশোর-২ আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডা.নসির উদ্দিন বলেন, মিথানল বিষক্রিয়া মানে রেকটিফাইড স্পিরিট এর বিষক্রিয়া। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন,সাধারনত রেকটিফাইড স্পিরিট পানে হার্ট ফেল করে মৃত্য হলে কারন হিসেবে এটা লেখা হয়।

রেকটিফাইড স্পিরিট কি ?? রেকটিফাইড স্পিরিট হলো ৯৫.৬% ইথাইল অ্যালকোহল ও ৪.৪% পানির সমস্ফুটন মিশ্রণ। এর স্ফুনাংক ৭৮.১০ সে. । রেকটিফাইড স্পিরিট ডাক্তারি কাজে ও দ্রাবকরুপে ব্যবহৃত হয়। এই স্পিরিট খুবই বিষাক্ত এবং হজমের অনুপযোগী। সাধারণত বিষাক্ত মেথিলেটেড স্পিরিট ট্যানারি শিল্পে, কাঠের আসবাব রং করার কাজে ব্যবহার হয়। মাত্র ১০ মিলি লিটার (দুই চা চামচের একটু বেশি) স্পিরিট খেলেই চোখ জ্বালাপোড়া করে এবং যার কারনে মানুষকে অন্ধত্ববরণ করতে হবে। আর বেশি খেলে কোমায় গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু হবে। সহজলভ্য এবং দাম কম হওয়ায় এই স্পিরিট দিয়ে অবৈধভাবে বিষাক্ত মদ তৈরি হচ্ছে।

স্পিরিট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন বলেন, আমি এক সময় এ ব্যবসা করতাম। ( দৈনিক ইত্তেফাকের খবর অনুযায়ি-২০১১ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর চৌগাছায় বিশাক্ত মদ খেয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়।) ২০১২ সালে একটি ঘটনায় চানপুর গ্রামের নুর ইসলাম, তার শালা আশা, যশোরের জাকির (মূল বিক্রেতা) ও আমার নামে মামলা হয়। আমি ছিলাম ২নম্বর আসামী। সেই সময় এসএম হাবিব আমাকে ফাসিয়ে মামলা দিয়েছিল। কিন্তু সেই স্পিরিটের ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতো এসএম হাবিবের ভাই আজু। সেই থেকে আমি আর এ ব্যবসা করিনা।
এ ব্যবসার সাথে পূড়াপাড়ার বিশিষ্ট মাদক ব্যবসায়ি সাইদুর মুন্সির নাম শোনা যাচ্ছে বলার সাথে সাথে তিনি সাইদুর মুন্সির সাথে কথা বলিয়ে দেন।
তারা দুজনই দাবী করেন রেকটিফাইড স্পিরিট ব্যবসার ঘটনায় তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে কিছু পাইনি চৌগাছা থানা পুলিশ।
সাইদুর মুন্সি বলেন,মৃত জাহাঙ্গীরের বাড়িতে চৌগাছা থানার এসআই বিকাশ এসেছিলেন। তিনি ওই মৃতের বাড়ি থেকে কি কি যেন লিখে নিয়ে গেলেন। তিনি বলেন দাদার সাথে (এসআই বিকাশ) আমার কথা হয়েছে। তিনিই (এসআই বিকাশ) আমাকে ফোন করেছিলেন।
পুলিশের তালিকাভূক্ত এবং একাধিক মাদক মামলার আসামী সাইদুর মুন্সি জোর গলায় বললেন,আমার নামে অনেক,অনেক মাদক মামলা ছিল। সেসব মামলার কিছু খারিজ আর জামিনে আছি। আমি গত ৬/৭ মাস মাদক ব্যবসা করিনা।

তারা দুজনই জানিয়েছেন,ওই দিন নূরে আলম বকুল (ভূক্তভোগীদের) তাদের কাছে স্পিরিট বিক্রি করেছে। আমরা তাকে (বকুলকে) বার বার ফোন করছি কিন্তু সে ধরছে না। নূরে আলম বকুলের ০১৬৩৪-৭০৮০৬১ নং মুঠোফোনে তিনবার সংযোগের চেষ্টা করা হলে শুধুমাত্র বিভিন্ন গানের ওয়েলকাম টিউন শোনা যায়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে চৌগাছা থানার এসআই বিকাশ বললেন, এঘটনার আমি বেশি কিছু জানিনা। ওসি স্যার আমাকে একটু খোজ নিতে বলেছিলেন। ওরা নাকি স্পিরিট টিসপিরিট কিছু খেয়ে খুলনায় গিয়ে মারা গেছে। ওরা গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাও নিয়েছিল। তবে মাাদক ব্যবসায়ী সাইদুর মুন্সির সাথে তার কোনো কথ হয়নি বলে দাবী করেন এসআই বিকাশ।

চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, পূড়াপাড়ায় একজন মারা গেছে শুনেছি।

ফেসবুকে লাইক দিন