আজঃ বৃহস্পতিবার ● ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ ● ২৮শে মার্চ ২০২৪ ● ১৭ই রমযান ১৪৪৫ ● বিকাল ৫:৫৭
শিরোনাম

By: মুক্তি বার্তা

শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যার ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বিভ্রান্তি বানারীপাড়ায় বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

ফাইল ছবি

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥
৭১’র শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার কন্যা ঢাবির  আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া একটি স্যাটাস নিয়ে বরিশালের বানারীপাড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।  তিনি ওই স্ট্যাটাসে তার চাচাতো ভাই অনুপ কুমার গুহ ও পল্লব কুমার গুহ’র বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় লাগোয় ৫ শতক সম্পত্তিতে বেড়া দিয়ে দখল করার প্রসঙ্গ টানেন। সেখানে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. শাহে আলমেরও নাম উল্লেখ করেন। এনিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও এর অনলাইন ভার্সনে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস ও এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বরিশালের বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ঘটনার ব্যাখা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারী) দুপুরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিতি বক্তব্য পাঠ করেন প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মাকছুদা আক্তার সহ অন্যান্য শিক্ষক মন্ডলী,অভিভাবক ও শিক্ষিার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান শিক্ষক তার লিখিত বক্তব্যে বলেন,গত ৩ জানুয়ারী দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন ও  ৪ জানুয়ারী দৈনিক প্রথম আলোসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সাথে বাস্তবিক কোন মিল নেই।

বানারীপাড়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পৈত্রিক ভিটায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে ১৯৭৭ সালে বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার’র তালিকাভূক্ত বিদ্যালয়টিতে সাধারণ ও কারিগরি শাখায় প্রায় ৮ শতাধিক ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। স্কুলটি কলেজে রূপান্তরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে বিদ্যালয়টির মূল গেট লাগোয়া পশ্চিম পাশের্^ ১৯৬৬ সাল থেকে বানারীপাড়া ৭নং সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের ব্যবহৃত সম্পত্তি। পরবর্তীতে ডিক্রী বলে অনুপ কুমার বিশ^াস ও তার ভাই পল্লব কুমার বিশ্বাসের মালিকানার ১৩ শতক সম্পত্তির মধ্যে  ৮ শতক  সম্প্রতি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকার অধিগ্রহণ করে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য পুরানো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করায় ক্রেতা উক্ত ভবনটি গত কয়েকদিন যাবৎ ভাঙ্গার কাজ করছেন, যা এখনও চলমান আছে। উক্ত ৮ শতক জমি দেয়ার পরে বিদ্যালয়ের  প্রধান ফটক সংলগ্ন আরও প্রায় ২-৩ শতক জমি থেকে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি ভাঙ্গার ফলে বিদ্যালয়ের উক্ত অংশটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষক,ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।  বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাত্রী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবীর প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত জায়গাটুকু টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়।

প্রধান শিক্ষক তার লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদে বরিশাল-০২ আসনের সংসদ সদস্য ও বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ শাহে আলম মহোদয়কে জড়িয়ে অসত্য, ভিত্তিহীন ও সম্মানহানিকর তথ্য প্রচার করা হয়। আমরা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবক এবং ছাত্রীরা সংবাদ সম্মেলনে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন রিপোর্টে প্রকাশিত চিত্রটি পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের। অথচ প্রকাশিত সংবাদে ওই ভবনটি অনুপ কুমার বিশ্বাসের নিজস্ব ভবন বলে দাবি করা হয়। প্রধান শিক্ষক তার লিখিত বক্তব্যে  উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে একটি প্রতারণা মামলায় ১ বছরের সাজা প্রাপ্ত আসামী অনুপ কুমার বিশ^াস, পিতা প্রফুল্ল কুমার বিশ^াস (মাখন বিশ^াস ) বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য নিজেকে গুহ পরিবারের সদস্য প্রমাণের ক্ষেত্রে তিনি বিশ^াস পদবীর সাথে গুহ ঠাকুরতা পদবী ব্যবহার করে আসছেন। অনুপ কুমার বিশ^াসের দাবিকৃত ওই সম্পত্তির আরও বেশ কয়েকজন মালিক দাবীদার বিদ্যমান রয়েছেন। এমতাবস্তায় প্রকৃত মালিক শনাক্ত করে ওই সম্পত্তির যথাযথ মূল্য পরিশোধ করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মত আছেন বলেও তিনি (প্রধান শিক্ষক) উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পৈত্রিক ভিটার মালিক দাবীদার অনুপ কুমার, গুহঠাকুরতা  পরিবারের সদস্য হলে ওয়ারিশ সূত্রেই ওই সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন। সেক্ষেত্রে তাকে ওই সম্পত্তির ডিক্রি মূলে মালিক হতে হবে কেন?। এ প্রসঙ্গে অনুপ কুমার গুহ বলেন,সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে যতদূর যাওয়া প্রয়োজন তিনি যাবেন।
এদিকে মেঘনা গুহঠাকুরতার অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শাহে আলম বলেন, ওই জমিতে বানারীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব  কার্যালয় (ভবন) ছিল। স্কুলের পুরো জায়গাটা মেঘনা গুহঠাকুরতার বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক জ্যোর্তিময় গুহঠাকুরতা দিয়েছিলেন। অনুম কুমার ওনার নাম ব্যবহার করে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। আমরা প্রয়োজনে মেঘনা গুহঠাকুরতার সঙ্গে কথা বলতে রাজি। ওনার সঙ্গে কথা বললে আর এমন সমস্যা থাকবে না বলে আমার বিশ্বাস।

প্রসঙ্গত,শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতার পৈত্রিক ভিটায় বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হলেও ভিপি ‘ক’ তালিকাভূক্ত হওয়ায় ( ভিপি কেস নম্বর-৩৪০/১৯৬৯) জমির দানপত্র দলিল নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারের কাছ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ দশমিক ৭২ একর সম্পত্তি  প্রতিবছর (একসনা ) লিজ নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন