By মুক্তি বার্তা
বন্যায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন
অনলাইন ডেস্কঃ চলতি বছরের বন্যায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগে। এ বিভাগে ৭৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে কিংবা অবকাঠামো নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতি হয়েছে সিলেট বিভাগে ৬৩৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪৬টি ও বরিশাল বিভাগে ৩০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
জানা যায়, বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো ব্যবহার উপযোগী করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভবনগুলো দ্রুত মেরামত ও ব্যবহারের উপযোগী করতে সংশ্নিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নদীতীর ও চর এলাকায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, চর এলাকায় নদীর চার কিলোমিটার দূরত্বে ভবন নির্মাণ করার পরও রক্ষা পায়নি। তাই ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আর প্রথাগত উপায়ে ভবন নির্মাণ করা হবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক জেলা-উপজেলায় নদীতে বিলীন শিক্ষাভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কারণে নতুন ভবনে লেখাপড়ার সুযোগ আর পেলেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে বিলীন ও বিধ্বস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে কোন স্থানে নির্মাণ করা হবে, সে তালিকা এখনও সম্পন্ন হয়নি। বিলীন এসব প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছেও নেই।
আগামী সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে ভবিষ্যতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হলেও এই বন্যার কারণে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করতে পারবে না।
এক সপ্তাহও হয়নি চরাঞ্চলের বাতিঘর নামে পরিচিত মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা এলাকার এসইএস ডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ২০০৯ সালে এ বিদ্যালয়ে যখন পাঠদান শুরু হয়, তখন পদ্মা নদীর সীমানা ছিল প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। ২০১২ সালে বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ বিদ্যালয়ে ২৪টি গ্রামের প্রায় ৩০০ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করত।
এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলে যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভবন। ভাঙনে চরম হুমকির মুখোমুখি এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি বাজার, নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠ, একটি বিএস কোয়ার্টার, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দুটি জামে মসজিদ, তিনটি মোবাইল টাওয়ার ও একটি বাজার।
কুড়িগ্রাম জেলার থেতরাই ইউনিয়নের জুয়ান সাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয়টি নতুন করে কোথায় স্থাপন করা হবে, তা ঠিক করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলে মেঘনা নদীতীরে রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারটি সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছিল নতুন করে। কিন্তু সেখানে লেখাপড়া করার সুযোগ আর পেলেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উদ্বোধনের আগেই নদীর অতলে বিলীন হয়ে গেছে নতুন এ বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ভবনটি।
মুবার্তা/এস/ই